ফাইল চিত্র।
আর্থিক সঙ্কটে জেরবার কলকাতা পুরসভা বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের খরচে রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিল। পুরসভা সূত্রের খবর, পুর এলাকায় নানা সরকারি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। পুরসভার বর্তমান অর্থসঙ্কটের কথা মাথায় রেখে সেই সব অনুষ্ঠানে খরচের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পুর সচিবালয় দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভা এলাকায় কোনও প্রকল্পের উদ্বোধন থেকে শুরু করে টালি নালা থেকে পলি
তোলার মতো কাজের জন্যও শামিয়ানা খাটিয়ে সরকারি অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, এই ধরনের অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেও মোটা টাকা খরচ হয়। পুরসভার বর্তমান আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে তাই পুর কমিশনারের তরফে আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠানের খরচের বহর কমাতেই হবে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আগে যে অনুষ্ঠানের জন্য দু’লক্ষ টাকা ব্যয় হত, এখন সেখানে অর্ধেক খরচ করতে বলা হয়েছে।’’
পুরসভার কোষাগারের দৈন্যদশা বর্তমানে কিছুটা ঘুচলেও পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরসভার আয় বলতে কর রাজস্ব আদায়। সে ক্ষেত্রে মূল আয় হয়ে থাকে সম্পত্তিকর থেকেই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সম্পত্তিকর আদায়ে গতি আসেনি। সাধারণ মানুষ নিয়মিত করের টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু বছরের পর বছর ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের
থেকে মোটা টাকা আদায় অনাদায়ীই থেকে যাচ্ছে।’’
বিরোধীদের ব্যাখ্যা, নমনীয় মনোভাবে পুরসভার কোষাগার ভরবে না। কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের যুক্তি, ‘‘প্রয়াত পূর্বতন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় বকেয়া কর আদায়ে মধ্য কলকাতার একটি হোটেলের জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। সেই রকম কড়া পথ অবলম্বন করতে হবে বর্তমান মেয়রকেও।’’ পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘মোটা টাকার করখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তা সত্ত্বেও পুরসভা একাধিক করখেলাপির ঠিকানায় তালা ঝুলিয়ে কর আদায় করেছে। আগামী দিনেও একই পথ অবলম্বন করা হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার যে সব চুক্তিভিত্তিক কর্মী এজেন্সির মাধ্যমে নিযুক্ত, তাঁদের বেশির ভাগই এখন অনিয়মিত ভাবে বেতন পাচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মোট বেতনের মাত্র চল্লিশ শতাংশ হাতে পেয়েছেন তাঁরা। যে এজেন্সির মাধ্যমে পুরসভায় সব থেকে বেশি কর্মী কাজ করেন, সেখানকার এক ম্যানেজারের কথায়, ‘‘আমাদের সংস্থা দ্বারা পুর স্বাস্থ্য দফতরে দেড় হাজার কর্মীর বেতন বাবদ গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় দশ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে পুরসভার থেকে আমাদের সংস্থার প্রায় কুড়ি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা নিয়মিত না পাওয়ায় কর্মীদেরও বেতন দিতে
সমস্যা হচ্ছে।’’
সেপ্টেম্বরের পরে অবসর নেওয়া পুরকর্মীদের পেনশনও নিয়মিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় পুরসভার স্থায়ী কর্মীরাও আশঙ্কায় রয়েছেন, পুর কোষাগারের অবস্থা না ফিরলে তাঁদের ক্ষেত্রেও আগামী দিনে বেতনে কোপ পড়বে না তো? তবে এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘এতটা খারাপ পরিস্থিতি এখনও হয়নি।’’