ফাইল চিত্র।
সম্পত্তিকর বাবদ রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে কলকাতা পুরসভা পুর আইনের ১৮টি ধারা সংশোধন করতে চায়। সম্প্রতি পুর প্রশাসকমণ্ডলীর বৈঠকে এই বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ওই প্রস্তাব কার্যকর করতে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর। পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভার প্রস্তাব বিধানসভায় গৃহীত হলেই সেটি বলবৎ হবে।’’
করোনা অতিমারির ধাক্কায় পুরসভার আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। তার উপরে শহরের বহু সম্পত্তির অ্যাসেসমেন্ট বা মিউটেশন না হওয়ায় পুরসভা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কলকাতা পুরসভা আইন ১৯৮০-এর ১৮টি ধারাকে সংশোধন করে বিভিন্ন ভাবে সম্পত্তিকর আদায় বাড়াতে চান পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সম্পত্তিকরের বিল এত দিন নাগরিকদের ডাকযোগে পাঠানো হত। অনেক ক্ষেত্রে করখেলাপিদের বার বার নোটিস দিলেও তাঁরা করের টাকা জমার বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন। পুর আইনের ২১৬ নম্বর ধারার সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, করদাতাদের সম্পত্তিকরের বিল তাঁদের মোবাইলে এসএমএসে পাঠানো থেকে শুরু
করে পুরসভার ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এর পরেও কেউ কর প্রদানে অনীহা দেখালে তাঁর বিরুদ্ধে জরিমানা-সহ ব্যবস্থা নিতে পারবে পুরসভা।’’
পুর আইনের ২১৫ নম্বর ধারার সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, এ বার থেকে তিন মাস পর পর সম্পত্তিকর অনলাইনে জমা দিলে করের উপরে অতিরিক্ত এক শতাংশ রিবেট দেবে পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, এত দিন তিন মাস পর পর সম্পত্তিকর অনলাইনে জমা দিলে পাঁচ শতাংশ রিবেট মিলত।
অনেকে বাড়িতে অতিরিক্ত নির্মাণকাজ করলেও পুরসভাকে না জানানোয় পুরসভা কর থেকে বঞ্চিত হয়। আবার পুর আইনের ১৮২ নম্বর ধারায় সংশোধনী প্রস্তাব এনে বলা হচ্ছে, এই ধরনের নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরসভাকে জানানো বাধ্যতামূলক। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেউ অতিরিক্ত তল নির্মাণের তথ্য গোপন করলে পুর কর্তৃপক্ষ কঠোর হয়ে মোটা টাকা জরিমানা আদায় করতে পিছপা হবেন না। এ ক্ষেত্রে পুরসভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, নানা জটিলতায় শহরের অনেক সম্পত্তির মিউটেশন না হওয়ায় পুরসভা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুর আইনের ১৮৩ নম্বর ধারা সংশোধনীর প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, এ বার থেকে কলকাতা পুরসভা শহরের যে কোনও সম্পত্তি মিউটেশনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এর ফলে পুরসভা যেমন উপকৃত হবে, তেমনই সাধারণ মানুষেরও নিরাপত্তা বজায় থাকবে। পুরসভা জানাচ্ছে, শহরের বহু মানুষ আছেন যাঁরা জানেনই না যে বাড়ি, ফ্ল্যাট কেনার পরে তার মিউটেশন করাতে হয়। অথচ মালিকের কাছে জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাটটির প্রামাণ্য নথি হিসাবে রাখতে মিউটেশন করা জরুরি।
১৮২ (এ) ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব অনুযায়ী কোনও সম্পত্তির মিউটেশনের সময়ে তার ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত শহরের অনেক মানুষ জেনারেল রিভ্যালুয়েশন (জিআর) পদ্ধতিতে মূল্যায়নের ভিত্তিতে সম্পত্তিকর জমা দেন। তবে নতুন মিউটেশনের সময়ে ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হলে নাগরিকদের অনেকটাই বেশি কর দিতে হবে বলে আশঙ্কা। শহরের বাড়িমালিকদের সংগঠন ‘দ্য ক্যালকাটা হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রক্ষিতের অভিযোগ, ‘‘ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হলে সাধারণ মানুষের করের টাকা দিতে ঘাম ছুটে যাবে। এই আইন চালু হলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’