পুর আইনে কিছুই বলা নেই। বোতলবন্দি জলের বেআইনি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তাই কার্যত হাত-পা গুটিয়ে কলকাতা পুরসভা।
গত কয়েক দিন ধরে বোতলবন্দি জলের কারখানাগুলিতে অভিযানে চালিয়ে কলকাতা পুরসভা কয়েকটি বেআইনি সংস্থার হদিস পেয়েছে। কোনও কোনও সংস্থার জলে মিলেছে বিপজ্জনক মাত্রায় কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়াও। এমনকী বেশ কয়েকটি সংস্থার বৈধ কাগজ না থাকারও অভিযোগ জানায় পুরসভা। অথচ বৈধ লাইসেন্স ছাড়া ওই জল বিক্রি সত্ত্বেও, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কার্যত থমকে পুর প্রশাসন। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, পুর আইন অনুযায়ী তাদের কিছু করার নেই। যা করতে হবে এনফোর্সমেন্ট শাখাকেই। তাই বেআইনি সংস্থাগুলির নামের তালিকা তৈরি করে এনফোর্সমেন্ট শাখার কলকাতা এবং রাজ্যের কর্তাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এ দিন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেআইনি কাজ করে কেউ ছাড় পাবেন না।’’
যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী বুধবার পুরভবনে মেয়র ও মেয়র পারিষদের উপস্থিতিতে কলকাতা পুলিশ, এনফোর্সমেন্ট শাখা, রাজ্য পুলিশ, ফুড সেফটি দফতর-সহ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা হাজির থাকবেন। বোতলবন্দি জলের বেআইনি কারবারিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা সে দিনই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানান এক পুর অফিসার।
সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার বাঘা যতীন, যাদবপুর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে আন্ত্রিকের প্রকোপ বাড়তেই অভিযোগ ওঠে, পানীয় জল থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে। পুরসভার সরবরাহ করা জল থেকেই যে তা ছড়াচ্ছে এমন কথাও শোনা যায় শাসক দলের একাধিক কাউন্সিলরের মুখেই। এর পরেই পুরকর্মীদের জলের পরীক্ষায় ধরা পড়ে সরবরাহ করা একাধিক উৎসে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার উপস্থিতি। সেই সঙ্গে বোতলবন্দি জলেও মেলে ওই জীবাণু। এর পরেই মেয়র বলেন, বোতলবন্দি জলই আন্ত্রিকের অন্যতম কারণ হতে পারে। দিন কয়েক আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে বোতলবন্দি জলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংগ্রহ করা ষোলোটি সংস্থার জলের নমুনা পরীক্ষা করে তেরোটিতেই মিলেছে ব্যাক্টিরিয়া। যার আবার দু’টি নামী ব্র্যান্ডের এবং একটি রাজ্য সরকারের সংস্থা। এক পুরকর্তা জানান, আগামী সোমবার বিকেলে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে একটি নামী সংস্থার কর্তা পুরভবনে আসবেন।
এ দিন অতীনবাবু বলেন, ‘‘এনফোর্সমেন্ট শাখার ডিজিকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। চিঠি পাঠানো হচ্ছে কলকাতা পুলিশের ডিসি ইবিকেও।’’ কিন্তু পুরসভার সরবরাহ করা জল থেকে যে কলিফর্ম মিলেছে তার কী হবে? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর থেকে। মেয়রের কথায়, ‘‘ওই জল পুরসভার সরবরাহ করা হলেও, নোংরা জায়গায় ছিল। এ জন্যই কলিফর্ম মিলেছিল।’’ পুরসভার সরবরাহ করা জলে দূষণের প্রমাণ মেলেনি বলে এখনও তাঁর দাবি।