বিপদ: ময়দানে ছড়িয়ে থার্মোকলের থালা-বাটি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
মশাবাহিত রোগের দাপট ঠেকাতে এ বার শহরে থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধ করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।
প্রাথমিক ভাবে পুরসভার সব কমিউনিটি হলের অনুষ্ঠানে থার্মোকলের থালা-বাটি-গ্লাসের ব্যবহার রদ করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে সারা শহরেই তা প্রযোজ্য হবে। পুরসভার যুক্তি, ব্যবহৃত থার্মোকলের থালা-বাটি-গ্লাস যেখানে সেখানে ফেলা হয়। তাতে জল জমে থাকে। সেই জমা জলই মশার আঁতুড়ঘর। তা থেকে বাড়ছে ডেঙ্গির আশঙ্কা। তাই সম্প্রতি পুর প্রশাসনের বৈঠকে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, থার্মোকল বন্ধ করা হোক। কিন্তু প্রস্তাবের কার্যকারিতা নিয়ে গোড়াতেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের একাংশের মত, লাগাতার প্রচারের পরেও শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। যত্রতত্র পড়ে থাকছে প্লাস্টিকের পাত্র। সেখানে থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধ আদৌ সম্ভব কি?
পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সহজে নষ্ট না হওয়া থার্মোকলের পাত্র বা বাক্সে জল জমে বংশবিস্তার করছে ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশা। পুর কর্তাদের একাংশের মত, এ কারণেই পুরসভার তরফে লাগাতার অভিযান চালানো হলেও কিছুতেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাঁদের বক্তব্য, নিকাশি রুদ্ধ হওয়ার কারণও এই থার্মোকল।
এই সব কারণেই প্রাথমিক ভাবে পুরসভার কমিউনিটি হলগুলির অনুষ্ঠানে থার্মোকলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেছেন কর্তৃপক্ষ। সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখার কথাও বলা হচ্ছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘কোনও একটা জায়গা থেকে তো শুরু করতে হবে। তাই পুরসভার কমিউনিটি হল থেকেই থার্মোকলের ব্যবহার রদ করা হচ্ছে। এর পরে পুরো শহরে তা বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা হবে।’’ মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘চলতি মাস থেকেই পুরসভার কমিউনিটি হল ভাড়া দেওয়ার শর্ত হিসেবে এটা উল্লেখ থাকছে। যিনি হল ভাড়া নেবেন, এই শর্ত মানা তাঁর কাছে বাধ্যতামূলক।’’
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার মতো ডেঙ্গি প্রতিরোধের কারণে থার্মোকল নিষিদ্ধ করার কথা না ভাবলেও, জঞ্জাল পৃথকীকরণ ও নিকাশির কথা ভেবে গত বছর থেকেই থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধে কড়া হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল নিউ ব্যারাকপুর ও মধ্যমগ্রাম পুরসভা। গত জুলাইয়ে নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা থার্মোকলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে জানায় নিয়ম না মানলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই জরিমানা করা হবে। পুরসভার উপ পুরপ্রধান মিহির দে মেনে নিয়েছেন, এখনও পুর এলাকার অনেক জায়গাতেই ব্যবহার হচ্ছে থার্মোকল। পাশাপাশি তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘গত দেড় বছরে এক জনকেও জরিমানা করা হয়নি।’’ অন্য দিকে মধ্যমগ্রাম পুরসভার পুর পারিষদ (স্বাস্থ্য) নিমাই ঘোষ বলছেন, ‘‘চোরাগোপ্তা ভাবে অনেক জায়গায় থার্মোকল বিক্রি হচ্ছে। সবাই মিলে সচেতনতা প্রচার করছি।’’
৫০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যবহার করা যাবে না— এই নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে কলকাতা পুরসভা কার্যত কিছুই করে উঠতে পারেনি! সেখানে কমিউনিটি হলে থার্মোকলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পরিস্থিতি কতটা বদলানো যাবে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, বিচ্ছিন্ন ভাবে প্লাস্টিক বা থার্মোকল ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে তা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেই তো শুধু হবে না! উৎপাদন বন্ধ করতে না পারলে কোনও লাভ হবে কি! তাঁদের প্রশ্ন, বছর খানেক আগে প্লাস্টিক ব্যবহার করলে জরিমানা করা হবে, পুরসভার তরফে রাজ্য সরকারের কাছে সে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছিল। তা এখনও আইন হয়ে আসেনি। তার কী হল, সেটাই তো কেউ জানেন না!
স্বপনবাবুর বক্তব্য, ট্রেড লাইসেন্সের তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছে, এ শহরে প্লাস্টিক বা থার্মোকল উৎপাদনকারী ইউনিট কোনও জায়গায় নেই। স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘সব প্লাস্টিক বা থার্মোকল বাইরে থেকে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া আইন করা দরকার। এ ব্যাপারে সুপারিশের জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম।’’ সেই প্রস্তাবের এখন কী অবস্থা, তা অবশ্য স্বপনবাবু
জানাতে পারেননি।