ডেঙ্গি রোধে দায়িত্ব কার, বিতর্ক নাগরিক সমাজে

সাহিত্যিক বাণী বসুর বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি রোধে পুরসভা যে যথেষ্ট কাজ করছে না, সেটা বলার কী আর অপেক্ষা রাখে! শহরের অলিগলি ঘুরলেই তো সেটা বোঝা যায়। অনেক জায়গাতেই জঞ্জাল জমে রয়েছে। অথচ জঞ্জাল পরিষ্কার করার প্রচার করে পুরসভা!’’ 

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রতি বছরই ডেঙ্গি-যুদ্ধে বিবদমান দু’পক্ষ তৈরি হয়ে যায়। চলে দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের পালা। নাগরিকদের একাংশ যেমন মনে করেন, ডেঙ্গি রোধে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা যথেষ্ট নয়। তেমনই পুর কর্তৃপক্ষও মনে করেন, নাগরিকদের সচেতনতার অভাবেই শহরে ডেঙ্গির মাত্রা লাগামছাড়া। শহরের বিশিষ্টজনেরাও ডেঙ্গি রোধে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। এক পক্ষের বক্তব্য, ডেঙ্গি রোধে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা মোটেই যথেষ্ট নয়। অন্য পক্ষ মনে করছেন, ডেঙ্গি নিয়ে শুধু পুরসভাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদেরও সমান দায়িত্ব রয়েছে।

Advertisement

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নাগরিকদের সচেতনতার একটা অভাব রয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরসভার যে ভূমিকাটা পালন করার কথা ছিল, সেটাও তো তারা করছে না। এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে একটা সভ্য দেশে আমরা ডেঙ্গির কাছে হেরে যাচ্ছি। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সমন্বয় রেখে পুর প্রশাসনকে কাজ করতে হবে।’’

সাহিত্যিক বাণী বসুর বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি রোধে পুরসভা যে যথেষ্ট কাজ করছে না, সেটা বলার কী আর অপেক্ষা রাখে! শহরের অলিগলি ঘুরলেই তো সেটা বোঝা যায়। অনেক জায়গাতেই জঞ্জাল জমে রয়েছে। অথচ জঞ্জাল পরিষ্কার করার প্রচার করে পুরসভা!’’

Advertisement

পুরসভার জঞ্জাল ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনার যে অভাব রয়েছে তা নিয়ে অভিযোগ করছেন পরিবেশকর্মী নব দত্তও। নববাবুর বক্তব্য, ‘‘এ শহরে দু’টি শহর রয়েছে। একটি শহরের মূল রাস্তা, যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। অন্য দিকে, শহরের অলিগলি ঘুরলেই বোঝা যায় যে সেখানকার কী অবস্থা! সারা বছর ধরে জঞ্জাল সংগ্রহ ও নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামো ঠিক ভাবে না করলে শুধু ডেঙ্গি কেন, জলবাহিত বা মশাবাহিত যে কোনও রোগই ঠেকানো যাবে না।’’

তবে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের জন্য শুধু পুর প্রশাসনকে দোষী করতে নারাজ নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তাঁর মতে, নাগরিকেরা যদি নিজের বাড়ির সামনে জঞ্জাল বা জল জমিয়ে রাখেন, সেখানে পুরসভার কী করণীয়! রুদ্রপ্রসাদবাবুর কথায়, ‘‘আমরা যেমন নাগরিক, আমাদের পুরসভাও তো তেমনই হবে। পুরসভা যথেষ্ট কাজ করছে না, কিন্তু আমরাও তো নিজেদের দায়িত্ব পালন করছি না।’’ গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্র অবশ্য মনে করেন, পুরসভা যথেষ্ট চেষ্টা করছে। কিন্তু বারবার বলার পরেও যদি নাগরিকেরা জমা জল বা জঞ্জাল নিয়ে সচেতন না হন, তা হলে তো পুরসভার কিছু করার নেই।

ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের পাল্টা দাবি, অন্য সব বিষয়ে যেখানে নাগরিক সমাজ এত সরব, সেখানে ডেঙ্গি নিয়ে কেউ কোনও কথা বলেন না কেন! জনমানসে বিশিষ্টজনেদের একটা প্রভাব রয়েছে। তাঁরা তো সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কর্মশালা, আলোচনাসভার আয়োজন করেন। রাস্তাতেও নামেন। কিন্তু ডেঙ্গির ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনেদের কী ভূমিকা রয়েছে? সে প্রশ্ন তুলেছেন অতীনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে শুধু আমরা চিৎকার করলে হবে না। কয়েক জন বিশিষ্টজনকে দিয়ে প্রচার চালাচ্ছি। কিন্তু অন্য বিশিষ্টজনেদেরও তো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে আসা উচিত। তাঁদের তো দেখতে পাচ্ছি না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement