প্রাণঘাতী: বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে সেই বাতিস্তম্ভ (চিহ্নিত)। রবিবার, নারকেলডাঙা এলাকায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
১৩ বছরের মহম্মদ ফরজ়ান আনসারির মৃত্যুর দায় কার? কাদের গাফিলতিতে তার এমন মর্মান্তিক পরিণতি হল? নারকেলডাঙায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই কিশোরের মৃত্যুতে এমনই নানা প্রশ্নে রবিবার দিনভর সরগরম থাকল এলাকা। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ বিভিন্ন মহল থেকে সামনে আনা হলেও বাসিন্দাদের একাংশ বৈদ্যুতিক খুঁটির রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন। ইতিমধ্যেই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পুলিশ, সিইএসসি, রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে পুরসভার তরফেও একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
নারকেলডাঙা থানা এলাকার রাজা রাজনারায়ণ স্ট্রিটে শনিবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় মহম্মদ ফরজ়ান আনসারি নামে এক কিশোরের। জমা জলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ওই বৈদ্যুতিক খুঁটি ছুঁয়ে ফেলে বছর তেরোর কিশোর। মিনিট কুড়ি পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর পরেই বাসিন্দারা বৈদ্যুতিক খুঁটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সরব হন। যদিও অভিযোগ উঠেছে, যে খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল ফরজ়ান, সেখান থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে জলের পাম্প চালানো হচ্ছিল। পুরসভার দাবি, জমা জলের মধ্যে বিপজ্জনক ভাবে পাম্প চালানোয় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ঘটেছে ফরজ়ানের।
ঘটনার তদন্তে পুরসভার তরফে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। পুরসভা, পুলিশ, সিইএসসি ছাড়াও রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের শীর্ষ কর্তারা তাতে থাকবেন। রবিবার বেলায় ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা। বাসিন্দারা তাঁদের সামনেই বৈদ্যুতিক খুঁটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সরব হন। তাঁদের বক্তব্য, রক্ষণাবেক্ষণের কথা আগে বার বার বলা হলেও কাজ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা ইনামুল হক বলেন, ‘‘বছরখানেক আগে ওই খুঁটিতে মুখ দিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল একটি গরু। সেই সময়েও পুরসভাকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। সেই একই খুঁটির সংস্পর্শে এসে ফরজ়ানের মৃত্যু হল। ফের তদন্ত কমিটি গঠন হল। কিন্তু এর শেষ কোথায়?’’
এ দিকে শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দফতরের সচিবকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। রবিবার বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বিষয়টি পুর এলাকার। এখানে সিইএসসি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এমন কেন ঘটল, তদন্ত করে শীঘ্রই রিপোর্ট দিতে বলেছি বিদ্যুৎ দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুরেশ কুমারকে।’’
ডিভাইডারের উপরে বিপজ্জনক ভাবে খোলা থাকা বাতিস্তম্ভ ঢেকে দেওয়ার কাজ করছেন পূর্ত দফতরের এক কর্মী। রবিবার, ময়দানের কাছে। ছবি: সুমন বল্লভ
পুরসভার দাবি, ঘটনার সময়ে ওই বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। পাশাপাশি পুরসভার আলো বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, বাতিস্তম্ভ নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। সেখানে কোনও গাফিলতি ছিল না। যদিও ওটা বাতিস্তম্ভ নয় বলেই দেখা গিয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটেছে যে স্তম্ভে হাত লেগে, সেটি সম্পর্কে সিইএসসি জানিয়েছে, শহরের অন্য জায়গার মতোই নারকেলডাঙার ওই সব এলাকাতেও তারা মাটির নীচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বৈদ্যুতিক খুঁটির দায়িত্ব তাদের নয়। তবে খুঁটি কার? স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পুরসভাই বিভিন্ন সময়ে ওই খুঁটিগুলি বসিয়েছিল।
এ দিকে শনিবার রাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকায় হুকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সীও বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটছে। তা আটকানোর দায়িত্ব পুরসভার পাশাপাশি সিইএসসির। ছোট ছোট গলিতে রাতে হুকিং করে সকালে খুলে দেয়। পুরসভা কত নজরদারি করবে? তবে পুরসভার তরফে থানায় অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে।’’ আর সিইএসসি জানাচ্ছে, কেউ অভিযোগ দায়ের করলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কিন্তু বিদ্যুৎ চুরি হলে পুরসভা কেন ব্যবস্থা নেয় না? স্থানীয় কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তীর যুক্তি, ‘‘ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায়বেশির ভাগ গরিব মানুষ থাকেন। তাঁদের তো আর জল, বিদ্যুতের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা যায় না! এখন পুরসভা, পুলিশ তদন্ত করে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিক।’’