KMC

KMC: প্রাপ্যের বড় অংশ বাদ দিয়েই চালু হতে পারে পুর পেনশন

কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার বলেন, ‘‘সকলেরই পেনশন চালু হয়ে যাবে। অনেকের হয়ে গিয়েছে। আমরা এটা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’’

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

কলকাতা পুরসভার পেনশন-জট এখনও খোলেনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে অবসর নেওয়া অধিকাংশ পুরকর্মী পেনশনের টাকা এখনও হাতে পাননি বলে অভিযোগ। পুরসভা সূত্রের খবর, আগামী মাস থেকে ‘কমিউটেশন ভ্যালু’ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা বাদ দিয়ে পেনশন চালু করার চিন্তাভাবনা করছে পুরসভা। সে ক্ষেত্রে অবসরকালীন প্রাপ্যের একটি বড় অংশ (গ্র্যাচুইটি, কমিউটেশন) আপাতত আটকে রেখেই পেনশন চালু করা হতে পারে। আর্থিক দুরবস্থার কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। এক শীর্ষ পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা গত এক মাসে রাজ্যের কাছ থেকে পেনশন সেলের জন্য ২৫ কোটি টাকা পেয়েছি। কিন্তু ওই টাকার পুরোটাই প্রাপ্য মেটাতে খরচ হয়ে গিয়েছে। এখনও অনেকের পেনশন বকেয়া। টাকা এলে আগামী মাস থেকেই দেওয়া হবে।’’

Advertisement

পুরসভার অর্থ দফতর সূত্রের খবর, কোষাগারের অবস্থা ভয়াবহ। পুরকর্মীরা দীর্ঘ দিন পেনশন না পাওয়ায় গত মাসে টাউন হলে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেই সময়ে পুরসভার মাসিক অধিবেশনের শেষে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘পেনশন আমাদের অগ্রাধিকার। সবার আগে পুরকর্মীদের বেতন ও পেনশন দেওয়া হবে। দরকারে ঠিকাদারদের পাওনা দেরিতে মেটানো হবে। কিন্তু কর্মীদের বেতন ও পেনশনের টাকায় হাত দেব না।’’ কিন্তু মেয়রের আশ্বাসের পরেও পেনশন চালু না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় অবসরপ্রাপ্তেরা।

পুরসভার অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন কর্মী চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। গত এক মাসে রাজ্য সরকারের থেকে পাওয়া ২৫ কোটি টাকায় ১২০ জন অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীর অবসরকালীন প্রাপ্য মেটানো হয়েছে। পুর অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রাপ্য মেটানোর জন্য ২৫ কোটি টাকা খুবই সামান্য। এখন রাজ্যের কাছ থেকে মোটা টাকা না পেলে অবসরপ্রাপ্ত সকলের বকেয়া প্রাপ্য মেটানো অসম্ভব।’’

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, নিজেদের আর্থিক দুরবস্থার কথা মাথায় রেখেই সম্প্রতি শীর্ষ কর্তারা পেনশন বিভাগে পাঠানো বিভিন্ন ফাইলে ‘কমিউটেশন ভ্যালু’ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা বাদ দিয়ে পেনশন চালু করতে নোট লিখে পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ, অবসরকালীন প্রাপ্যের একটি বড় অংশ না দিয়েই আপাতত প্রতি মাসে পেনশন চালু করতে চায় পুরসভা। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘তার মানে এই নয় যে, অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীরা ওই টাকা পাবেন না। আর্থিক সমস্যার জন্য আপাতত এই পথে হাঁটতে চাইছে পুরসভা। পুরসভার কাছে টাকা এলেই সমস্ত বকেয়া একেবারে মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’

দীর্ঘ দিন ধরে পেনশন না পাওয়ায় পুরসভার সদর দফতরের পেনশন বিভাগে রোজই ঘুরে যাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। গত অক্টোবরে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। তিনি জানালেন, এখনও তাঁর পেনশন চালু হয়নি। একই বক্তব্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর নেওয়া এক মেডিক্যাল অফিসারের। তাঁর কথায়, ‘‘অবসরকালীন প্রাপ্য টাকার বেশির ভাগটাই পেয়েছি। কিন্তু মাসিক পেনশন এখনও চালু হয়নি। পুরসভা থেকে বলা হয়েছে, মার্চ থেকেই নাকি তা চালু হবে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, এখন প্রতি মাসেই কয়েকশো করে পুরকর্মী অবসর নেবেন। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে পেনশন ঠিক সময়ে মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান পুরকর্মীরা।

বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীলের অভিযোগ, ‘‘কমিউটেশন ভ্যালু বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা বাদ দিয়ে পেনশন চালু করা মানে পেনশন-বিধি ভঙ্গ করা। এর ফলে অবসরপ্রাপ্তেরা ভাল রকম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আমরা শীঘ্রই এ বিষয়ে আন্দোলনে নামব।’’

কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার বলেন, ‘‘সকলেরই পেনশন চালু হয়ে যাবে। অনেকের হয়ে গিয়েছে। আমরা এটা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement