মহেশ ভুঁইয়া
পুরসভার ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনে নিকাশি চেম্বারে কাজ করতে নেমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক ঠিকা শ্রমিকের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, এন্টালির পামারবাজার পাম্পিং স্টেশনের ঘটনা। মৃতের নাম মহেশ ভুঁইয়া (৩০)। বাড়ি তিলজলার গোবিন্দ খটিক রোডে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে এন্টালি থানার পুলিশ। অভিযোগ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই পুরসভার কাজ হচ্ছিল এ দিন।
মৃতের দাদা বসন্ত ভুঁইয়া এ দিন জানান, ভাই চিংড়িহাটা পাম্পিং স্টেশনে ঠিকা সাফাইকর্মীর কাজ করতেন। তাঁর অভিযোগ, এর জন্য মহেশকে নর্দমাতেও নামতে হত। তিনি জানান, এর পাশাপাশি বাড়তি রোজগারের জন্য পাম্প সারাইয়ের কাজও শিখেছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সেজ মহেশ। বৃহস্পতিবার পামারবাজার পাম্পিং স্টেশনের ড্রেনেজ চেম্বারের নোংরা জলে নেমে পাম্প সারাইয়ের কাজ করছিলেন মহেশ। মহেশ ছাড়া আরও কয়েক জন শ্রমিকও সেখানে ছিলেন। মহেশের ঠিকাদার সঞ্জীব সিংহ বলেন, “মহেশ ও রাজকিশোর নামে আর এক জন শ্রমিক নোংরা জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে পাম্পের নাট ঠিক করছিলেন। আচমকা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে মহেশ ছিটকে যান। রাজকিশোরও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। কিন্তু কোনও ভাবে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজকিশোরের চিৎকার শুনে মিটার বাক্স থেকে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের এক কর্মী। তাতেই আর কারও ক্ষতি হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। মহেশের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ঠিকাদার। তিনি ট্যাক্সি ডেকে মহেশকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। বসন্ত বলেন, “ভাই পামারবাজার ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনে যখন কাজ করছিল, তখন দু’ফুট মতো নোংরা জলে ছিল ও। ওই জল যা নোংরা, তাতে যে কেউ সেখানে নেমে কাজ করবেন না। ভাই যেহেতু নর্দমায় নামত, তাই ওকেই এ কাজ করার জন্য পামারবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।” ঠিকাদার বলেন, “এর আগেও মহেশেকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছি। কখনও অঘটন ঘটেনি। এ বারই যে কী ভাবে এমন ঘটল, বুঝতে পারছি না।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়া নর্দমায় ভিতরে কাউকে যে কাজ করানো যাবে না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। সংসদে পাশ হওয়া আইনে এর অন্যথা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনের বজ্র আঁটুনি সত্ত্বেও যে পুরসভার এ নিয়ে নজরদারি করা উচিত, সেই পুরসভারই পাম্পিং স্টেশনে এমন ঘটনা কেন, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে। মৃতের ভাই খুশকুমার ভুঁইয়া বলেন, “আমার ভাইয়ের সঙ্গে যা ঘটল, তা যাতে আর কারও সঙ্গে না হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত।” বসন্ত বলেন, “আমার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। কিন্তু ওকে নিরাপত্তা ছাড়া কেন কাজে নামানো হল?”
সাফাই কর্মচারীদের জন্য গঠিত জাতীয় কমিশনের সম্পাদক নারায়ণ দাস বলেন, “এন্টালিতে যা ঘটেছে, তা আইনের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে যাঁরা দোষী, পুলিশের তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অভিযোগ পেলে আমরাও পুরসভার কাছে জবাব তলব করব।” মেয়র পারিষদ নিকাশি তারক সিংহ বলেন, “এ ক্ষেত্রে ঠিকা শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ঠিকাদারের। পুরসভার এটা দেখার বিষয় নয়। তবুও মৃতের পরিবার যাতে প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটা দেখা হবে।”