নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার পানীয় জলের কল থেকে জল ভরতে গিয়ে রবিবার আঁতকে উঠেছিলেন অনেকে। ঘোলাটে জল দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁরা। চড়া দামে পানীয় জল কিনে খেতে শুরু করেন উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। সোমবার অবশ্য সেই জলে ঘোলাটে ভাব অনেকটা কমেছে। তবে এর পরেও আতঙ্ক কাটেনি দমদম, সল্টলেকের বাসিন্দাদের।
কেন এই অবস্থা? কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম সরাসরি ডিভিসি-কে দুষে বলেছেন, ‘‘ডিভিসি মাত্রাতিরিক্ত হারে জল ছাড়ায় এই দশা। এর ফলে জলের তোড়ে গঙ্গার পলি উঠে আসছে। পুরসভার পলতা ও গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প লাগোয়া গঙ্গা থেকে জল তোলার সময়ে জলের পরিবর্তে পলি উঠছে। ওই জল পরিশোধন করতে দেরি হচ্ছে। জলের গতি কম থাকায় জলের সরবরাহের পরিমাণও অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা আর দিন দুয়েক থাকবে।’’ তবে পুরসভার সরবরাহ করা জল নাগরিকেরা খেতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
রবিবার সব চেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল উল্টোডাঙা ও মানিকতলা এলাকায়। ওই দিন ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কল থেকে ঘোলাটে জল বেরোলে আতঙ্ক ছড়ায়। সিঁথি এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রবিবার সকালে যে জল আসে, তার রং দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। সোমবার অবশ্য জলের ঘোলাটে ভাব তুলনায় কম।’’ পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘আমার ৩০ বছরের কর্মজীবনে গঙ্গার জল এত ঘোলাটে দেখিনি। রবিবার পলতা জলপ্রকল্পে গঙ্গা থেকে যে জল তোলা হচ্ছিল, তাতে পুরোপুরি কাদা মেশানো ছিল। জলের রং ছিল অনেকটা কালচে লাল। ওই জল পুরসভার জলপ্রকল্পে এনে পরিশোধন করেও ঘোলাটে ভাব যায়নি।’’ তবে সোমবার থেকে জলের উপরের অংশ (পলি ছাড়া) তুলে বেশি সময় ধরে পরিশোধন করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ওই কর্তা। তিনি আরও বলেন, ‘‘নাগরিকদের কাছে আমাদের আবেদন, দয়া করে পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করুন।’’
কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর অমল চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘রবিবার ঘোলা জল না খাওয়ার জন্য অটোয় করে ওয়ার্ডে প্রচার করেছি। তবে পুরসভায় কথা বলে জেনেছি, আজ থেকে ওই জল খাওয়া যাবে।’’ একই অবস্থা ছিল ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও। দক্ষিণ দমদমে আপাতত ভূগর্ভস্থ জল সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান দক্ষিণ দমদম পুরসভার মুখ্য প্রশাসক।
ফিরহাদ জানিয়েছেন, শুধু উত্তর কলকাতাই নয়, হুগলির উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া, উত্তর ২৪ পরগনার গাড়ুলিয়া, নৈহাটি প্রভৃতি পুর এলাকাতেও একই সমস্যা হয়েছে। তবে বর্তমানে পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জল নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।