ফাইল চিত্র।
শহরে দূষণের ১০টি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করল কলকাতা পুরসভা। ওই ১০টি জায়গার মধ্যে মানিকতলা মেন রোড, ক্যানাল সাউথ রোড যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আনন্দপুর, মুকুন্দপুরও। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ওই ১০টি জায়গায় ‘এয়ার পলিউশন মনিটরিং স্টেশন’ তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে আবেদন জানিয়েছে। নবান্ন সূত্রে এমনটাইজানা যাচ্ছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শহরে দূষণের হটস্পট চিহ্নিতকরণ এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই মতোই রাজ্য পরিবেশ দফতর সরকারের অন্য দফতরগুলির সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোন দফতর বা কোন সংস্থা কী পদক্ষেপ করবে, তা ঠিক করা হয়। কলকাতা পুরসভার উপরে দায়িত্ব পড়ে শহরে দূষণের হটস্পটগুলি চিহ্নিত করার জন্য। সেই মতো পুরসভার বায়ুদূষণ রোধক সেল ১০টি হটস্পট চিহ্নিত করে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের সমস্ত জায়গাতেই ছড়িয়ে রয়েছে ওই হটস্পটগুলি।
তবে শহরে ১০টি হটস্পট চিহ্নিত হলেও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রসঙ্গের উল্লেখ করছেন। তা হল, শহরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) ক্রমহ্রাসমানতা। যা কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষায় উঠে এসেছে। পর্ষদ জানিয়েছে, কলকাতায় ২০২০-’২১ সালে বাতাসে পিএম১০-এর গড় পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৯৫ মাইক্রোগ্রাম হ্রাস পেয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পিএম১০-এর গড় পরিমাণ যেখানে প্রতি ঘনমিটারে ২৩৭.৫৭ মাইক্রোগ্রাম ছিল, সেখানে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা প্রতি ঘনমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে ১৯১.৭৫ মাইক্রোগ্রামে। আবার চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি ঘনমিটারে পিএম১০-এর গড় পরিমাণ ছিল ১৮৯.২৮ মাইক্রোগ্রাম। ফলে শীতের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মাসে (ডিসেম্বর, ২০২১ এবং জানুয়ারি, ২০২২) কলকাতার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ কমেছে। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এটা কিন্তু রাজ্য সরকারের তথ্য নয়! এই তথ্য খোদ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। ফলে দূষণ কমাতে রাজ্য সরকার যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করছে, তা বোঝাই যাচ্ছে।’’
প্রশাসনের এই যুক্তি মানতে যদিও নারাজ পরিবেশকর্মীদের একাংশ। বায়ুদূষণ মামলার আবেদনকারী, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, এখনও কলকাতা ও হাওড়ার রাস্তায় চলা ১৫ বছরের পুরনো গাড়িই পুরোপুরি বাতিল করতে পারল না রাজ্য সরকার। অথচ, বিভিন্ন রিপোর্টে ধরা পড়েছে যে, যানবাহনের ধোঁয়াই শহরের দূষণের অন্যতম কারণ।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ আদালতের নির্দেশে তৈরি শহরের বায়ুদূষণের উৎসের সমীক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্টে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি) জানিয়েছিল, কলকাতার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার ১০ শতাংশেরই নেপথ্যে রয়েছে যানবাহনের ধোঁয়া। আবার বাতাসে ২৫ শতাংশ অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণারও (পিএম২.৫) উৎস হল যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘সেখানে প্রতি ঘনমিটারে কত মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা কমল, এটা সংখ্যার কচকচানি ছাড়া কিছু নয়।’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘পরিসংখ্যানের দিক থেকে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ফল ধারাবাহিক ভাবে ধরে রাখা যাবে তো? কারণ, এখনও শহরে প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের উৎসজনিত হরেক কর্মকাণ্ড হয়েই চলেছে।’’
ফলে শহরে ১০টি দূষণ হটস্পট চিহ্নিত করা হলেও দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে তো? না কি পুরনো গাড়ি বাতিলের মতো একের পর এক নির্দেশিকা জারি করেই বিষয়টিতে দাঁড়ি পড়বে?— প্রশ্ন পরিবেশবিদ মহলের।