গার্ডেনরিচে বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনায় অস্বস্তি কিছুতেই কাটছে না কলকাতা পুরসভার। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনায় অস্বস্তি কিছুতেই কাটছে না কলকাতা পুরসভার। ঘটনা নিয়ে মতান্তরে জড়িয়ে পড়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। এমনই পরিস্থিতিতে ঘটনার তদন্তে নেমেছে কলকাতা পুরসভা। ঘটনার জেরে যে আধিকারিকদের শোকজ় করা হয়েছিল, এ বার সেই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। পুর প্রশাসন সূত্রে খবর, এক জন এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং এক জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে এই তদন্ত হবে। এই তিন আধিকারিককে সোমবার শোকজ় করেছিল কলকাতা পুরসভা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে যে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেই ইঙ্গিত পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই ওই তিন আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। এ বিষয়ে পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
পুরসভার এই পদক্ষেপকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তিনি বলেন, “আসলে ওই আধিকারিকদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। বেআইনি নির্মাণ করে কারা টাকা খেয়েছে, আর কারা শাস্তি পাচ্ছে এখন সবাই জেনে গিয়েছে। আসলে কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের মেরুদণ্ড নেই। তাঁদের তো আর বদলি করে শিলিগুড়ি পাঠানো যাবে না। পুরসভার সকল আধিকারিক যদি একজোট হয়ে তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেঁকে বসে, তা হলেই পুর প্রশাসন স্তব্ধ হয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “পুর আধিকারিকদের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণ নেই আমি এমনটা বলছি না। তবে এ ক্ষেত্রে পুর আধিকারিকদের প্রতিবাদ করা দরকার। কারণ মেয়র নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ব্যর্থ হয়েছেন। অভিযুক্ত ওই প্রোমোটার যে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ হয়ে তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে হেঁটেছে তা-ও প্রমাণিত। কারা ওই ঘটনার জন্য দায়ী তা-ও পুরসভার আধিকারিকরা জানেন। এই সময় যদি তাঁরা প্রতিবাদ না করেন, তা হলে বার বার তাদের বলি পাঁঠা হতে হবে।” রবিবার রাতের এই ঘটনার পর সোমবার পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ। মেয়র নির্দেশ দেন, শহরে সমস্ত বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে নোটিস ইস্যু করতে। সঙ্গে ওই আধিকারিকদের শোকজ় করা হয়। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হচ্ছে।
গার্ডেনরিচে বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনার অস্বস্তি কাটাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। মঙ্গলবার বিকেলে নির্দেশিকা জারি করে বিল্ডিং বিভাগে ব্যাপক রদবদল ঘটিয়েছেন মেয়র। বিল্ডিং বিভাগের এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও তিন জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) দেবব্রত ঘোষকে বিল্ডিং বিভাগ থেকে সরিয়ে পাঠানো হয়েছে, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-১ বিভাগে। তাঁর সঙ্গেই সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) শুভম ভট্টাচার্যকেও ওই একই বিভাগে পাঠানো হয়েছে। দু’জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) সবুজ বিশ্বাস ও তন্ময় কুইল্যাকে যথাক্রমে জলবণ্টন বিভাগ এবং টালিনালা ও নগর বিকাশ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বদলে বিল্ডিং বিভাগের নতুন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) পদে আনা হয়েছে বরুণ সরকারকে। তাঁকে টালিনালা ও নগর বিকাশ বিভাগ থেকে এই দায়িত্বে আনা হয়েছে। অন্য তিন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে আনা হয়েছে কুশল মণ্ডল, সত্যপ্রিয় সরকার ও মনোজকুমার ঘোষকে। তাঁদের জলবণ্টন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং টালিনালা ও নগর বিকাশ বিভাগ থেকে বিল্ডিং বিভাগে আনা হয়েছে।