—প্রতীকী ছবি।
ভিতরে বসবাসের ফ্ল্যাট ভেঙে সেখানে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বহিরাগত। কো-অপারেটিভের তরফে এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে বিধাননগর পুরসভাও জানিয়ে দিয়েছে, সেখানে সংস্কারের কাজ হয়েছে বেআইনি ভাবে। অথচ যিনি সেই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাঁর খোঁজ না করে বিধাননগর পুরসভা ধরেছে কো-অপারেটিভকেই। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিয়ম বহির্ভূত নির্মাণ ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে। সল্টলেকের আইবি-২ নম্বর বাড়ি নিয়ে ওই নির্দেশ দিয়েছে বিধাননগর পুরসভা। কী ব্যবস্থা কো-অপারেটিভ নিয়েছে, তা দু’সপ্তাহের মধ্যে না জানালে পুরসভার তরফে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিস পাঠানো হয়েছে।
আদালতের বিচারে বেআইনি সাব্যস্ত হয়েছিল একটি ক্লাব। আদালতের নির্দেশে সেটি ভাঙতে গত মঙ্গলবার বিধাননগর পুরসভা ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপট্টিতে গিয়েছিল। সেই ক্লাবের দেওয়ালে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি জয়দেব নস্করের বিরাট ছবি রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের প্রবল বাধার সামনে পড়ে পুরসভা ও পুলিশ সেখান থেকে ফিরে যায়।
ফলে প্রশ্ন ওঠে, যেখানে সরকারি বাহিনী নিয়ে সরকারি সংস্থা বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে অপারগ, সেখানে একটি কো-অপারেটিভের বাসিন্দা কিছু সাধারণ মানুষ ও প্রবীণ নাগরিক মিলে বেআইনি নির্মাণ ও আবাসিক বাড়িতে বাণিজ্যিকস্থল নির্মাণকারী প্রভাবশালীকে থামাতে কি আদৌ সক্ষম হবেন?
বিধাননগর পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকদের যুক্তি, তাদের রেকর্ডে আইবি-২ কো-অপারেটিভ হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে। ওই বাড়ির একতলার বেআইনি নির্মাণের দায় কো-অপারেটিভকেই নিতে হবে। যে কারণে পুরসভা ওই কো-অপারেটিভের সভাপতি ও সম্পাদককে নোটিস দিয়ে নির্দেশ জানিয়েছে। এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘কো-অপারেটিভ ওই নির্মাণকে নোটিস দিতে পারে, তাদের দফতরকে জানাতে পারে, পুলিশের সাহায্য নিতে পারে। যা করার তাদেরই করতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে পুরসভার ওই নির্মাণে প্রবেশে আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।’’
আবাসনের বাসিন্দাদের দাবি, একতলায় ওই দোকান নির্মাণ বেআইনি দাবি করে ২০২২ সালেই তাঁরা স্থানীয় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তথা ৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জন পোদ্দারকে চিঠি দিয়েছিলেন। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দোকানটিতে আগুন জ্বালিয়ে রান্না তো হতই। আবাসনের উপরেও বহু বার রান্নার কাজ হয়েছে। বিপদ আশঙ্কা করে তাঁরা সমস্যার সমাধানে সর্বত্র দৌড়ঝাঁপ করেছেন।
শেষে গত ৮ জানুয়ারি ওই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে নড়ে বসে বিধাননগর পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। কো-অপারেটিভ আবাসনের একতলায় পরিদর্শনে যায় পুরসভা। কো-অপারেটিভকে তারা নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেয় যে, ওই আবাসনের একতলার সংস্কারের কাজ সর্বশেষ নকশায় যা বলা ছিল, সেই মতো হয়নি। এমনকি বেআইনি ভাবে দেওয়াল ভেঙে একটি ফ্ল্যাট ও চারটি দোকান মিলিয়ে একটি বিরাট বাণিজ্যিকস্থলে পরিণত করা হয়েছে। পুরসভা তার
নোটিস তথা রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছে, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অনুমোদন ছাড়াই আবাসিক
ফ্ল্যাটকে বাণিজ্যিকস্থলে বদলে দেওয়া হয়েছে।
এ সব ঠেকাতে বিধাননগর পুরসভা কো-অপারেটিভের সভাপতি ও সম্পাদককে চিঠি দিতেই ফের সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, বহু বছর ধরে কো-অপারেটিভে নির্বাচন হতে দেওয়া হয়নি। অতএব এই কো-অপারেটিভের সভাপতি কিংবা সম্পাদক কেউ নেই।
রাজীব মিত্র নামে এক বাসিন্দা তথা কো-অপারেটিভের সদস্যের পাল্টা দাবি, ‘‘আমরাই পুরসভাকে জানালাম বেআইনি নির্মাণের কথা। পুরসভা সেই নির্মাণ বন্ধ করাতে
এখন আমাদের কোর্টে বল ঠেলছে! যদি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার এক্তিয়ার রাখে পুরসভা, তবে নির্মাণ বন্ধের দায় তারা নেবে না কেন? এটা কি সাধারণ মানুষের কাজ? এক
বছর আগে পুরপ্রতিনিধিকে সব জানানো হয়েছে। আবাসিক ফ্ল্যাটে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড করে পুরসভার প্রাপ্য কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, তা কি পুরপ্রতিনিধি বোঝেননি? আমরা ওই নির্মাণে ঢুকলে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে।’’