Trident Lamp

বিতর্ক নিয়ে জন্ম, বিতর্ককে সঙ্গী করেই ‘মৃত্যু’, কলকাতা থেকে সরে যাচ্ছে ত্রিফলা আলো

রাজ্যে পট পরিবর্তনের পরে শহর সাজাতে ২০১২ সালে প্রায় ১২ হাজার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসিয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল পুর বোর্ড। এর জন্য খরচ হয়েছিল ২৭ কোটি টাকা।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৪০
Share:

ত্রিফলার বদলে বসানো হবে এক স্তম্ভের আধুনিক আলো। ফাইল চিত্র।

জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্ক ধাওয়া করছে। তার দিনও ফুরোচ্ছে বিতর্কের বোঝা নিয়ে। দশ বছরেই তাই পাকাপাকি ভাবে আলো নিভতে চলেছে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের। ধীরে ধীরে শহর থেকে সেগুলি সরিয়ে ফেলা হবে বলে ঠিক করেছে কলকাতা পুরসভা। জন্মলগ্নে ত্রিফলা কেলেঙ্কারি। পরবর্তী কালে চুরি, দ্রুত অকেজো হওয়া এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার একাধিক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এই আলোর। তাই ত্রিফলা আলো রাখতে আর রাজি নয় কলকাতা পুর প্রশাসন। বদলে বসানো হবে এক স্তম্ভের আধুনিক আলো।

Advertisement

রাজ্যে পট পরিবর্তনের পরে শহর সাজাতে ২০১২ সালে প্রায় ১২ হাজার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসিয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল পুর বোর্ড। এর জন্য খরচ হয়েছিল ২৭ কোটি টাকা। কিন্তু এই বাতিস্তম্ভ বসানোর পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। দরপত্র ছাড়াই বাজারদরের তুলনায় বেশি দামে ওই আলো কেনার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন পুর বোর্ডের বিরুদ্ধে। পুরসভার নিজস্ব অডিটেও অনিয়ম ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় পুরসভার তৎকালীন ডিজি (আলো)-কে পদ থেকে সরিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়।

ত্রিফলা বসানোর নামে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগের তদন্তে নামে ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (সিএজি)। তাদের রিপোর্টে বলা হয়, বাজারদরের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে বাতিস্তম্ভ কেনা হয়েছে। আরও বলা হয়, ত্রিফলার জন্য বাড়তি প্রায় আট কোটি টাকা খরচ করেছে পুরসভা! সেই বিতর্কের পরে শহরে নতুন করে কোথাও এই বাতিস্তম্ভ বসানো হয়নি।

Advertisement

এর পরেও অবশ্য ত্রিফলা আলো নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, নতুন আলো লাগানোর পরপরই অন্তত এক হাজার বাতি চুরি হয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে বাতিস্তম্ভ। আলো দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, বাতি থাকা সত্ত্বেও শহরের বহু রাস্তায় ত্রিফলা জ্বলে না। প্রায় তিন হাজার বাতিস্তম্ভ এ ভাবেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কোনও ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের দু’টি, কোথাও বা তিনটিই অকেজো। এমনকি এর কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তাই বর্ষার চার মাস ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বন্ধ ছিল।

পুরসভা সূত্রের খবর, ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসানোর পরে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়মিত বাতি চুরির অভিযোগ আসতে থাকে। বসানোর প্রথম দু’বছরের মধ্যে প্রায় কুড়ি শতাংশ বাতি চুরি গিয়েছিল। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের ঢাকনা ও বাতি চুরির অভিযোগ থামছিল না। পুলিশে অভিযোগ করেও লাভ হচ্ছিল না। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনাও ঘটেছিল।’’

মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বর্ষার চার মাস বন্ধ থাকার পরে ফের ত্রিফলা চালু করা হয়েছে। কিন্তু যেখানে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ খারাপ হচ্ছে, সেখানে নতুন করে তা আর সারানো হবে না। পরিবর্তে এক স্তম্ভের আধুনিক বাতি বসানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement