এর আগে সম্পত্তিকর মূল্যায়ন এবং কর সংগ্রহ দফতরের গা-ছাড়া মনোভাবকে রাজস্ব-ক্ষতির জন্য দায়ী করা হয়েছিল। ফাইল ছবি
নাগরিক কর্তব্যে গাফিলতি থাকলেও প্রশাসনিক কর্তব্যে তা থাকবে কেন?—গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্ন তুলে রাজস্ব-ক্ষতির জন্য বিল্ডিং, পরিবেশ ও ঐতিহ্য, জঞ্জাল অপসারণ এবং বিজ্ঞাপন— এই চারটি দফতরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, এর আগে সম্পত্তিকর মূল্যায়ন এবং কর সংগ্রহ দফতরের গা-ছাড়া মনোভাবকে রাজস্ব-ক্ষতির জন্য দায়ী করা হয়েছিল।
পুর প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, কোনও কোনও কাজের জন্য রাজ্য সরকার এবং পুর আইনে নাগরিকদের থেকে টাকা আদায়ের সংস্থান থাকলেও প্রশাসনিক গাফিলতিতে তা না করা নিয়ে গোটা বিষয়ের সূত্রপাত। যেমন পুর আইন দফতর জানাচ্ছে, বেআইনি বাড়ি ভাঙা, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পুকুরের পাড় বাঁধানো ও সেটির সংরক্ষণ, মশার আঁতুড়ঘর আটকাতে জঞ্জাল সাফাই এবং হোর্ডিং, পোস্টার, কিয়স্ক খোলা ও সেগুলি সরানো সংক্রান্ত খরচ সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের থেকে আদায় করতে পারেন পুর কর্তৃপক্ষ। অথচ, তা করা হয় না। পুরসভা নিজের খরচে সেই কাজ করে। কিন্তু পুর কোষাগারের অবস্থা সঙ্গিন হওয়ায় এটি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কর্তব্য পালনে শিথিল মনোভাবকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৯৮০ সালের কলকাতা পুর আইনের ৪০০ (৭) ধারা অনুযায়ী, বেআইনি বাড়ি ভাঙার খরচ পুরসভা আদায় করতে পারে সেই বাড়ির মালিকের থেকে। আবার কেউ তাঁর মালিকানাধীন জলাশয় বা পুকুরের সংরক্ষণ না করলে অথবা পাড় না বাঁধালে ১৯৮৪ সালের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনল্যান্ড ফিশারিজ অ্যাক্ট’-এর ১৭ (এ) ধারার ১০ (বি) উপধারা অনুযায়ী পুর কর্তৃপক্ষ ওই জলাশয় বা পুকুরের ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে পারেন। সেটি সংরক্ষণের খরচ মালিকের থেকে আদায় করতে পারেন। কিন্তু বেআইনি নির্মাণ ভাঙা বা জলাশয় সংরক্ষণের খরচ, উভয় ক্ষেত্রেই সেই টাকা আদায়ে গা-ছাড়া মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। সেই কারণে বিল্ডিং এবং পরিবেশ ও ঐতিহ্য দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগ করে ওই কাজের জন্য অর্থ আদায়ের।
জঞ্জাল সাফাই দফতরকেও পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, পুর আইনের ৪৯৬এ (৭) ধারা অনুযায়ী মশার সম্ভাব্য আস্তানা সাফাইয়ের খরচ ‘স্পেশ্যাল কনজ়ার্ভেন্সি চার্জ’ হিসেবে ওই জমির মালিকের থেকে নিতে হবে। আবার পুর আইনের ২০৮ ধারা প্রয়োগ করে পোস্টার, হোর্ডিং, কিয়স্ক সরানোর খরচ সংশ্লিষ্ট মালিকের থেকে আদায়ের জন্য বলা হয়েছে বিজ্ঞাপন দফতরকে।
প্রসঙ্গত, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের দোষ ঢাকতে তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসনের সিংহভাগ অংশ, সেখানে নিজেদেরই দফতরের দিকে আঙুল তোলা এবং পুরসভার অন্তর্বর্তী লিখিত নোটে তার স্পষ্ট উল্লেখ ‘ব্যতিক্রমী’ পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অনেকে। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘পুর কোষাগারের বর্তমান অবস্থায় অর্থ আদায়ে প্রশাসনিক শৈথিল্যের বিলাসিতা দেখানো যাবে না, সেটা সব দফতরকেই বুঝতে হবে।’’