জ্বলন্ত: ময়দানে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের বর্জ্য। নিজস্ব চিত্র
শহরের বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বড়সড় ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছে প্লাস্টিক-বর্জ্য। প্লাস্টিক-বর্জ্য পোড়ানোর ফলে নির্গত গ্যাসে ক্ষতি হতে পারে ফুসফুসের। এমনকি সেই ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কলকাতা পুরসভার তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে এ বার তাই প্লাস্টিক-বর্জ্য পোড়ানো বন্ধের সুপারিশ হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
শহরের বায়দূষণ রোধে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী হতে পারে, সেই রূপরেখা তৈরির জন্য গত নভেম্বরেই একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছিল পুরসভা। বর্তমানে সেই কমিটির তরফেই একটি খসড়া রিপোর্ট প্রস্তুতির কাজ চলছে। পুরসভা সূত্রের খবর, আগামী মার্চে তা জমা পড়ার কথা।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, ধাপায় প্রতিদিন ৪২৬ টন অর্থাৎ মাসে ১২ হাজার ৭৮০ টন শুধু প্লাস্টিক-বর্জ্যই জমা হয়। কিন্তু ধাপার জঞ্জালে প্রায়ই আগুন লাগানোর ফলে সেই বর্জ্য পুড়তে থাকে, তাতে শহরের বাতাস আরও দূষিত হয় বলে একাধিক বার সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। বিশেষজ্ঞ কমিটি অবশ্য মনে করছে, ধাপা ছাড়াও শহরের অন্যত্র পড়ে থাকা জঞ্জাল এবং প্লাস্টিক-বর্জ্যও প্রায়ই পোড়ানো হয়। প্লাস্টিক-বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, এমনকি স্নায়ুর অসুখও হতে পারে বলে একাধিক গবেষণা দেখিয়েছে। ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার
ফোরকাস্টিং’-এর বিজ্ঞানী উপল সাহা এ বিষয়ে বলেন, ‘‘প্লাস্টিক-বর্জ্য পোড়ানোর ফলে সালফার ডাইঅক্সাইড, ডাই-অক্সিন-সহ যে দূষিত গ্যাস বেরোয় তাতে শ্বাসযন্ত্রে সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, সব ধরনের প্লাস্টিক-বর্জ্য পোড়ালেই যে ডাই-অক্সিন বেরোয় এবং তা থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে, এই ধারণাটা ঠিক নয়। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ এবং প্লাস্টিকের বোতলের মূল উপকরণ হাইড্রোকার্বন হওয়ায় মূলত সেগুলি পোড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেরোয়। তাঁর কথায়, ‘‘শুধুমাত্র পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি দিয়ে তৈরি প্লাস্টিকের পাইপ, দরজা বা প্লাস্টিকের তৈরি বেল্ট বা জুতোর সুখতলা পোড়ালে ডাই-অক্সিন বেরোয়।’’ রুরকি আইআইটি-র পলিমার অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ মাইতিরও বক্তব্য, ‘‘সালফার ডাইঅক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড না কি ডাই-অক্সিন বেরোচ্ছে, সেটা নির্ভর করে কী ধরনের প্লাস্টিক পোড়ানো হচ্ছে তার উপরে। সে দিক থেকে দেখলে শুধু প্লাস্টিক কেন, যে কোনও জিনিস পোড়ালেই তো দূষণ হয়।’’
যদিও পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, ধাপা পরিদর্শনের সময়ে তিনি দেখেছেন, বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায় এমন ধাতব বা অন্য জিনিস বর্জ্যের পাহাড় থেকে পৃথক করতে কাগজকুড়ানির দল বর্জ্যে আগুন লাগায়। তাঁর কথায়, ‘‘আগুন যাঁরা লাগান তাঁরা তো বোঝেন না, কোনটা পোড়ালে কী গ্যাস বেরোবে। এমনিতে বর্জ্য পোড়ালে সামগ্রিক ভাবে বায়ূদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে সেটা বন্ধ করতেই হবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, শুধু প্লাস্টিক-বর্জ্য পোড়ানোর ফলে দূষণই নয়। ওই খসড়ায় যেমন রাস্তার ধুলোর দূষণ, রাস্তার দু’পাশের দোকানে কয়লা জ্বালানোর ফলে দূষণ, ইমারতি দ্রব্যের দূষণও গুরুত্ব পাবে। তেমনই ঢাকা অবস্থায় লরি করে নির্মাণ সামগ্রী অন্যত্র নিয়ে যাওয়া বা কোনও বাড়ি ভাঙার সময়ে ধুলো যাতে আশপাশে উড়তে না পারে, তাই তা ঢেকে দেওয়া-সহ একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথাও ওই খসড়ায় উল্লেখ থাকতে পারে।