‘কাউন্সিলরের লোক’ নিয়োগ ঠেকাতেই কি তৈরি কমিটি

পুরসভায় কোনও সংস্থার দ্বারা নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কাউন্সিলরের পছন্দ প্রাধান্য পাবে, তা নিয়ে অতীতে একাধিক বার ‘দরাদরি’ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

শুধুমাত্র কথার ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগের বৈধতা নিয়ে সম্প্রতি হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কাউন্সিলরদের পছন্দমতো চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ শুধু হাওড়াতেই নয়, রয়েছে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধেও। তাই এ বার চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত কাজের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে বিশেষ স্ক্রিনিং কমিটি গঠন করছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

পুরসভায় কোনও সংস্থার দ্বারা নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কাউন্সিলরের পছন্দ প্রাধান্য পাবে, তা নিয়ে অতীতে একাধিক বার ‘দরাদরি’ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সে সময়ে ফাঁপরে পড়তে হয়েছে পুরকর্তাদের একাংশকে। কাউন্সিলরদের একাংশের ‘অনুরোধ’ রাখবেন, না কি দফতরের প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্থা মারফত লোক নিয়োগ করবেন— তা নিয়ে রীতিমতো দ্বিধায় পড়েছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়েই কাউন্সিলরের পছন্দই পুর আধিকারিকদের কাছে তাঁর নির্দেশ হয়ে ওঠে। তখন কাউন্সিলরের লোককেই কাজে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না কর্তাদের।

তাই এ বার কাউন্সিলরদের ‘চাপে’ লোক নিয়োগের সেই যুগ শেষ করতেই বিশেষ এই স্ক্রিনিং কমিটি তৈরি হল কি না, তা নিয়ে পুর অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা। পুরসভা সূত্রের খবর, এই কমিটির মূল কাজ হল কোনও পুর দফতরে

Advertisement

চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের আগে আদৌ সেখানে ওই সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। কোনও দফতর চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করতে চাইলে আগে সেই নিয়োগের যৌক্তিকতাও কমিটির কাছে প্রমাণ করতে হবে। যদি কর্মী নিয়োগের জন্য সেই দফতরের প্রয়োজনীয়তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়, তবেই সংশ্লিষ্ট কমিটি তাতে সম্মতি দেবে। পুরো প্রক্রিয়াটিই হবে রাজ্য পুর দফতরের অনুমোদনসাপেক্ষে।

যদিও কাউন্সিলরদের ‘চাপের’ বিষয়ে লোক নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রশাসনিক কারণেই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ছোটখাটো পুরসভায় হয়তো কাউন্সিলরদের চাপে লোক নেওয়া হতে পারে। কিন্তু কলকাতা পুরসভায় তা হয় না। চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাতে সমতা থাকে, তাই এই কমিটি তৈরি করা হয়েছে।’’

তবে কাউন্সিলরদের একাংশই জানাচ্ছেন, সংস্থা মারফত যে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ করা হয়, সেখানে অনেক কাউন্সিলরই ‘নিজের লোক’ নিতে অনুরোধ করে থাকেন। অনেকে আবার চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগের পিছনে ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’র বিষয়টিও স্বীকার করে নিয়েছেন। দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলেন, ‘‘যে সংস্থা মারফত চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হয়, কাউন্সিলরেরা অনেক সময়ে সেই সংস্থাকে নিজের লোকের কথা বলেন। কিন্তু আদৌ লোকের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তার উপরে লোক নিয়োগের বিষয়টি নির্ভর করে।’’ ১৬ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য আবার বলেন, ‘‘রাজনৈতিক একটা বাধ্যবাধকতা তো থাকেই। সেই কারণে দলের বেকার ছেলেদের কাজের জন্য বলতেই হয়। কিন্তু যাঁদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে, তাঁরা কর্মক্ষম কি না, সেটাই আসল কথা।’’

চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগে কাউন্সিলরদের একাংশের ‘প্রভাবের’ কথা পুরকর্তারাও অস্বীকার করতে পারেন না। তাই সেই ‘প্রভাবের’ যুগ শেষ হলে পুরমহলে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগের ‘সমীকরণ’ কী দাঁড়াবে, আপাতত সেটাই বড় প্রশ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement