পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মূলত অংশগ্রহণের ইচ্ছে থেকেই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অনেকে। ফাইল ছবি।
৯৫০ প্রার্থী পুর-লড়াইয়ে লড়েছিলেন। জিতেছেন ১৪৪ জন। অর্থাৎ মোট প্রার্থীর মাত্র ১৫ শতাংশ জয়ের শংসাপত্র হাতে পেয়েছেন। তার মধ্যে ৬২ হাজার ভোটে জিতে হইচই ফেলে দিয়েছেন ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খান। এটা যদি হয় মুদ্রার এক পিঠ, তা হলে অন্য দিকও রয়েছে। চাঁদের আলোকিত অংশের উল্টো দিকের ঘোর অন্ধকারের মতো অনেক প্রার্থীই আছেন যাঁদের জামানত তো খোয়া গিয়েছেই ৪৮ জন প্রার্থী প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে পেরোতে পারেননি দু’অঙ্কের গণ্ডিও!
পুরভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, ৯৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫১ জন প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা ১০ বা তার কম ভোট পেয়েছেন। শতাংশের হিসেবে ৫। ৪৮ জন পেরোতে পারেননি দু’অঙ্কের গণ্ডি। এর মধ্যে ৫০ জন নির্দল হিসেবে লড়েছিলেন। একজন লড়েন শরদ পওয়ারের এনসিপি-র হয়ে। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনসিপি প্রার্থী রাবিয়া সিকন্দর পেয়েছেন মাত্র তিনটি ভোট। চমকের এখানেই শেষ নয়, সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া ৫১ জনের মধ্যে দু’জন এমন রয়েছেন, যাঁরা কেবলমাত্র একটি করে ভোট পেয়েছেন। ৩৯ ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নির্দল প্রার্থী যথাক্রমে বিশাল গুপ্ত ও জোহরা ইকবাল কেবল নিজের ভোটটুকু পেয়েছেন। তেমনই দুটি ভোট পেয়েছেন এমন প্রার্থীও দু’জন। চার জন প্রার্থী পেয়েছেন তিনটি করে ভোট। তার মধ্যেই রয়েছেন এনসিপি প্রার্থী। এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ন’জন পেয়েছেন সাতটি করে ভোট। আরও ন’জন প্রার্থী আছেন, যাঁরা ন’টি করে ভোট পেয়েছেন। তিন জন প্রার্থী পেয়েছেন ১০টি করে ভোট।
গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
সদ্য শেষ হওয়া পুরভোটে প্রত্যাশিত ভাবেই ব্যবধান আরও বাড়িয়েছে তৃণমূল। ভোট কমেছে বিরোধীদের। প্রাপ্তি বলতে হাতে গোনা কিছু ওয়ার্ডে ধিকিধিকি অস্তিত্ব জানান দেওয়া। যদিও প্রায় ৭৬ শতাংশ প্রার্থী জামানত খুইয়েছেন। জামানত জব্দের তালিকায় একে কংগ্রেস, দুইয়ে বিজেপি, তিন নম্বরে বাম, বাকিরা নির্দল। স্বভাবতই তার মধ্যে রয়েছেন এই ৫১ জনও। নিয়ম বলে, মোট প্রদত্ত ভোটের এক ষষ্ঠাংশ ভোট না পেলে প্রার্থী যে টাকা খরচ করে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তা আর ফেরত পাবেন না।
ভোটে লড়াই করার ইচ্ছে অনেকেরই থাকে। কিন্তু জেতার মতো পরিস্থিতি সবসময় না-ও থাকতে পারে। কিন্তু তা বলে কি ভোটে লড়া ছেড়ে দেওয়া যায়! রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মূলত অংশগ্রহণের ইচ্ছে থেকেই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অনেকে। অনেকেরই আবার রয়েছে পরোক্ষ কোনও উদ্দেশ্যও। কেউ পুর-প্রার্থী হলে তাঁর চেনাজানার মধ্যে পরিচিতকে ভোট দেওয়ার দস্তুর মোটের উপর প্রচলিত। কিন্তু এক, দুই কিংবা চারটি করে ভোট পেয়েছেন যাঁরা, তাঁদের কি চেনা পরিচিত বা পরিবারের সদস্যরাও ভোট দেননি? ঠিক যেমন ৬৩ নম্বরের নির্দল প্রার্থী। নামে পরিচিতা হলেও ভোটবাক্সে তিনি আটকে গিয়েছেন মাত্র চার ভোটে।