ফাইল চিত্র।
খেলার দিন ঘোষণা হয়েছে মাত্র। কিক-অফের বাঁশি এখনও বাজেনি। কিন্তু খেলার আগেই গোল করা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন শামস ইকবাল! কারণ, সামনে ফাঁকা মাঠ!
গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের বিদায়ী কাউন্সিলর শামস। এ বারও তিনিই প্রার্থী। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত বিরোধী দলের কোনও প্রার্থীই নেই! বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী দেয়নি। আর বিজেপির প্রার্থী শেষ প্রহরে মনোনয়ন জমা দিয়েও দু’দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, কলকাতার ১৫ নম্বর বরোর ওই ওয়ার্ডে তিন জন নির্দল প্রার্থী অবশ্য ময়দানে আছেন। তবে রাজনৈতিক ধারে-ভারে বিচার করলে শাসক তৃণমূল ও তাদের দাপুটে কাউন্সিলরের সামনে প্রতীকহীন ওই প্রার্থীরা নেহাতই ‘দুধ ভাত’!
কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে বন্দর এলাকার এই একমাত্র ওয়ার্ডই এ বার ব্যতিক্রম। যেখানে শাসকের বিরুদ্ধে ময়দানে কার্যত কেউ নেই। এবং সেই ব্যতিক্রম ঘটিয়েই গার্ডেনরিচের এই ওয়ার্ড এখন নজর কাড়ছে।
কেন তাদের কোনও প্রার্থী নেই, বিরোধীদের তরফে ব্যাখ্যাও এক এক রকম। প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এবং বন্দর এলাকার নেতা মহম্মদ মোক্তারের দাবি, ওই ওয়ার্ডে সিপিএমের সংগঠন তাঁদের চেয়ে ভাল। আগে সিপিএমের কাউন্সিলর ছিলেন এই এলাকায় এবং পরেও বামেরা সেখানে যতটুকু পেরেছে, লড়াই করেছে। এ বার বামেদের কথা ভেবেই তাঁরা ওই ওয়ার্ড ছেড়ে রেখেছিলেন। মোক্তারের কথায়, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, সিপিএমই লড়বে। কিন্তু ওদের তালিকা বেরোনোর পরে দেখা গেল, ওরা প্রার্থী দেয়নি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গিয়েছে। আমাদের আর কিছু করার ছিল না।’’ শামসের ১৩৪ নম্বর সিপিএমের জন্য ছেড়ে রাখার কথা কংগ্রেস বললেও পাশের ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে কিন্তু দু’পক্ষই প্রার্থী দিয়েছে। সিপিএম অবশ্য ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রার্থী দিতে ‘না পারার’ অভিযোগ করছে। এখন তা হলে ১৩৪ নম্বরে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা কী করবেন? মোক্তারের জবাব, ‘‘তৃণমূলকে আমরা সমর্থন করব না। দলের কর্মীরা পাশের ১৩৩ ওয়ার্ডেই ভোটের কাজে থাকবেন।’’
সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার কারণ দেখাচ্ছেন সন্ত্রাসের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওখানে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে মুন্না ইকবাল আর ১৩৫ নম্বরে শামসুজ্জামান আনসারির লোকজন মিলে এমন ভয়-ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে যে, কেউই প্রার্থী হতে রাজি হননি। এখন ওখানে আমাদের আর অবস্থান ঠিক করার কিছু নেই।’’ প্রসঙ্গত, বিগত পুরভোটে গার্ডেনরিচের গুলি-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল মুন্নার।
‘বন্দুকের মুখে’ প্রার্থী প্রত্যাহারের অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। বিজেপির প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রার্থী মুমতাজ় আলির বয়ান অবশ্য তার সঙ্গে মিলছে না। মুমতাজ়ের দাবি, তিনি ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দলের ঘোষণায় মনোনয়ন জমা দিতে হয়েছিল ১৩৪-এ। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলাম আমি আর আমার ঠিক করা এজেন্ট। আর কেউ নেই! শাসক দলের লোকজনকে সেখানে দেখে কান্না পেয়ে গিয়েছিল। দলের কাউকে পাশে পাইনি, পরে মনোনয়ন তুলে নিয়েছি।’’ তাঁর আরও ক্ষোভ, এলাকায় তিনি কী ভাবে আছেন, কোনও খোঁজই দলীয় নেতৃত্ব রাখেননি। বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার এক শীর্ষ নেত্রী শুধু ফোন করেছিলেন। তবে মুমতাজ়ের মন্তব্য, ‘‘ফোন করে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, মুমতাজ’দা আছেন? প্রার্থী মহিলা না পুরুষ, সেটাও এঁরা জানেন না!’’
এমন পরিস্থিতিতে হাসি চওড়া হচ্ছে শামসের। ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগ নস্যাৎ করে তিনি বলছেন, ময়দানে কে আছে, কে নেই— সে সব নিয়ে তিনি মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাঁর দাবি, বাম ও কংগ্রেসের এখানে সংগঠন নেই। আর বিজেপির প্রার্থীর মনোনয়ন তুলে নেওয়া তাঁর ‘ব্যক্তিগত ব্যাপার’। শামসের বক্তব্য, ‘‘কয়েক বছর ধরে মানুষের বিপদে-আপদে পাশে রয়েছি। দল আমাকে আবার সুযোগ দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মধারা নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। তাঁরা মমতাদিদি’র সঙ্গেই আছেন।’’
তিন নির্দল কাইজ়ার খান, মহম্মদ সাদ্দাম হোসেন ও শায়েস্তা পরভিন আছেন খাতায়-কলমেই। শামস দিন গুনছেন খেলা শেষের বাঁশি বাজার!