শুভেন্দু অধিকারী।
কলকাতার ভোটে বাধা দিলে শহর অচল করার হুমকি দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আরও এক পা এগিয়ে শুক্রবার বিজেপির কর্মীদের প্রতি তাঁর নির্দেশ— কলকাতায় ভোট লুঠ হলে সর্বত্র রাস্তায় নামতে হবে তাঁদের।
অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে প্রচারের শেষ লগ্নেও আশঙ্কা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে বিরোধীরা। রাজ্যের পুলিশে অনাস্থা জানিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আদালতেও গিয়েছিল বিরোধী বিজেপি। আদালত তা খারিজ করার পরে শাসক ও প্রশাসনের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তমলুকে কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনেই দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আগামী ১৯ তারিখ ( কলকাতার ভোটের দিন) সব পার্টি অফিস বোঝাই রাখবেন। কলকাতায় মারলে, লুট করলে, রাস্তা অবরোধ হবে।’’
পুরভোটে মনোনয়নের সময় থেকেই ভয় দেখানো ও গা-জোয়ারির অভিযোগ করছে বিজেপি এবং অন্য দুই বিরোধী পক্ষ বাম ও কংগ্রেস। তৃণমূল পাল্টা বলেছে, সংগঠন ও জনসমর্থন না থাকায় হালে পানি না পেয়ে বিরোধীরা এই সব অভিযোগ করে চলেছে। শুভেন্দু অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড় থেকে এ দিনও বলেন, ‘‘প্রার্থীকে মারলে, এজেন্টকে মারলে, যে পঞ্চাশ, একশো, দুশো, বিশ, পঁচিশ, যেখানে যাঁরা আছেন, সবাই জায়গায় রাস্তায় নামবেন।’’
প্রচারের শেষ দিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে রোড-শো ও অল্প কিছু জনসভায় শামিল হয়েছিলেন বিরোধী নেতারা। লেবুতলায় ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষের সমর্থনে সভায় উপস্থিত হয়ে বিরোধী দলনেতা অবাধ ভোটের প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে গত লোকসভা ভোটের বুথের হিসেব সামনে আনার দাবি করেছেন। যার জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ২০২৪ সালে অভিষেক আরও বেশি ভোটে জিতবেন!
প্রচার শেষে শুক্রবার বিধান ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘পুর-নির্বাচনে কারচুপির নয়া তৃণমূল মডেল, সিভিক পুলিশদের ভোটার সাজিয়ে ছাপ্পা ভোট চলতে পারে। এই মডেল ভবানীপুর নির্বাচনে তৃণমূলকে খুব সাহায্য করেছে। কলকাতার মানুষ নিজের ভোট নিজে দিন, এই আহ্বান করছি।’’ তৃণমূলের অভিযেক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নাগরিকেরা অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এই প্রেক্ষিতে অধীরবাবুর মন্তব্য, ‘‘স্তোকবাক্যে ভরসা রাখা যাবে কী ভাবে? এর আগে ২০১৫-র পুরভোট ও ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট কী ভাবে হয়েছে, আমরা সবাই দেখেছি। এখনও শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এক কথা বলছেন আর স্থানীয় স্তরে অন্য জিনিস ঘটছে। মানুষ যাতে সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে পারেন, তার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর।’’ ভোটের দিন বিধান ভবনে নেপাল মাহাতো, অসিত মিত্রদের রেখে ‘ওয়ার রুম’ খুলবে প্রদেশ কংগ্রেস।
একই সুরে প্রচারের মাঝে এ দিন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘ক’দিন আগে ত্রিপুরার পুরভোটে বিজেপি বলেছিল, বিরোধীরা হালে পানি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে। কলকাতায় তৃণমূলেরও একই সুর! তৃণমূল এখানে বিরোধীশূন্য পুরসভা চায়। ভোট দখল করার চেষ্টা হলে মানুষ সাধ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ করবেন, আমরাও সেই লড়াইয়ে আছি।’’
বিরোধীদের বক্তব্য নস্যাৎ করে তৃণমূলের পার্থবাবু পাল্টা বলেছেন, ‘‘এ সব অবাস্তব, ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে করতে বাম-কংগ্রেস হারিয়ে যাচ্ছে। আর বিজেপি প্রচারে থাকতে চাইছে। ওদের অবস্থা আরও খারাপ!’’