জল-যন্ত্রণা: ব্রহ্মপুরের সর্দারপাড়ায় এ ভাবেই সারা বছর জমে থাকে জল। নিজস্ব চিত্র।
নর্দমা ছাপিয়ে ভাঙা রাস্তায় উপচে পড়ছে নোংরা জল। রাস্তার পাশে ইতিউতি পড়ে আবর্জনা। রাস্তার অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করা প্রায় দুষ্কর। ব্রহ্মপুর এলাকার পুর পরিষেবার হাল এখন এমনই। গত কয়েক বছরে ওই এলাকায় একের পর এক বহুতল গজিয়ে উঠলেও পুর পরিষেবার হাল রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।
ব্রহ্মপুরে কলকাতা পুরসভার ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের সর্দারপাড়া, বাদামতলা এলাকায় পুর পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে বাসিন্দারা বহু বার সরব হলেও কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশনের অদূরে এই এলাকায় দ্রুত বাড়ছে জনসংখ্যা। কিন্তু অভিযোগ, জনবসতি বাড়লেও পুর পরিষেবার উন্নতি হয়নি। সর্দারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় ইতিউতি জমে থাকা নোংরা জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। অভিযোগ, সারা বছরই রাস্তায় এ ভাবে নর্দমার জল জমে থাকে। ফলে মশা ও পোকামাকড়ের উৎপাত লেগেই থাকে। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হয়। রাস্তায় হাঁটুজল দাঁড়িয়ে যায় কখনও। গত বর্ষাতেও প্রায় পাঁচ দিন ধরে এলাকায় ঠায় জল দাঁড়িয়ে ছিল। তবু পুর প্রশাসনকে বার বার বলেও কোনও লাভ হয় না বলে দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা দীপঙ্কর সর্দার বললেন, ‘‘নিকাশি বলতে এলাকায় কিছুই নেই। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই হাঁটুজল জমে। জমা জল নামতে সময় লেগে যায় চার-পাঁচ দিন। বার বার বলেও লাভ হয় না। বর্ষায় কাজ বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।’’ যদিও বিদায়ী ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর এবং এ বারের ভোটে সিপিএম প্রার্থী চয়ন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘পুরসভার নথি দেখলেই বোঝা যাবে, কত বার এই নিয়ে সরব হয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে, এত দিন পরে মাসকয়েক আগে বড় নর্দমার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা চলছে ঢিমেতালে। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে।’’
এ বারের পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী সন্দীপ দাস অবশ্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এলাকার পুর পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘কাজ করতে না পারার কোনও অজুহাত খাটে না। ভোটে জিতলে কয়েক মাসের মধ্যেই এলাকার ভোল বদলে দেব। আগামী বছরের মধ্যেই পানীয় জল থেকে নিকাশি সমস্যার সমাধান করব।’’ এই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী পারিজাত চন্দ বলেন, ‘‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরেই ব্রহ্মপুর যে বঞ্চিত, তার দায় কোনও ভাবেই পুরসভা এড়াতে পারে না। আমরা কলকাতাকে লন্ডন বানাতে চাই না, কলকাতাকে তিলোত্তমাই রাখতে চাই।’’
বাস্তব হল, ব্রহ্মপুরের সর্দারপাড়া ও সংলগ্ন বাদামতলা এলাকায় সাফাইকাজ না-হওয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাদামতলা এলাকায় সকালে আনাজের বাজার বসার পরে সেই আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় না। আশপাশের এলাকারও একই হাল। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘৩৫ বছর ধরে এই এলাকায় রয়েছি। বাজার শেষ হলেও রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে দিনের পর দিন। আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়ালেও সাফাইকর্মীদের দেখা মেলে না।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস আটেক আগে এলাকায় বড় নর্দমার কাজ শুরু হয়েছে বটে, তবে তা এখনও চালু হয়নি। দাবি, সেই থেকেই রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে রয়েছে। যদিও বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর বলছেন, ‘‘ওই রাস্তাটি পিডব্লিউডি-র। বড় নর্দমা তৈরির কাজের জন্য রাস্তা ভাঙা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে রাস্তা সারাইয়ের কথা একাধিক বার বলা সত্ত্বেও কেন কাজ হল না, তা সংশ্লিষ্ট দফতরই বলতে পারবে।’’
ভোটের আগে দিন বদলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই। কিন্তু আদৌ বদল কোনও দিন হবে কি, সন্দিহান বাসিন্দারা।