ফাইল চিত্র।
কলকাতার পুর পরিষেবা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির ইস্তাহারে হরেক প্রতিশ্রুতির কথা থাকলেও সড়ক ও গণপরিবহণের উন্নতি নিয়ে সুসংহত কোনও পরিকল্পনার কথা নেই। এমনই অভিযোগ ট্রাম, রেল, বাস ও সাইকেলপ্রেমী সংগঠনগুলির।
দলীয় ইস্তাহারে ওই সমস্ত বিষয়কে যাতে জায়গা দেওয়া হয়, তার আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেদের চিঠি দিয়েছে ‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’। ওই সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, সারা পৃথিবীতেই দূষণ কমাতে উন্নত গণপরিবহণ ব্যবস্থার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে বেশির ভাগ মানুষ যাতে কম খরচে গণপরিবহণ ব্যবহারের সুযোগ পান, তা দেখতে বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। সম্প্রতি গ্লাসগোয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও এই আবেদনের কথা উঠে এসেছে। কলকাতায় যে হেতু রাস্তার পরিমাণ খুব কম, তাই সড়ক উন্নয়নের পরিকল্পনাকে গণপরিবহণ ব্যবস্থার থেকে আলাদা করে দেখা উচিত নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। এ শহরে পরিবহণের সুস্থ বাস্তুতন্ত্র তৈরি হলে, দূষণ কমার পাশাপাশি দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমবে বলে মনে করছেন সংগঠনের সদস্যেরা। কম খরচের গণপরিবহণ পেলে বহু মানুষের জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রেও তা
সহায়ক হবে।
ট্রাম সংগঠনের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, কলকাতায় একই রাস্তায় বাস, ট্রাম, অটো ও ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড় দেখা যায়। এতে সময় এবং জ্বালানির অপচয়ের পাশাপাশি পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূলের ইস্তাহারে উন্নত সড়ক নির্মাণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণ, ৫০টি চলমান সিঁড়ি-সহ ফুটব্রিজ ও ভূগর্ভস্থ পথ তৈরি এবং পুলকার ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, বহুতল পার্কিং ও পার্কিং অ্যাপ তৈরির কথা বলেছে তারা। কিন্তু বিভিন্ন পরিবহণ ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় তৈরির কথা বলা হয়নি।
বিজেপির ইস্তাহারে মেট্রো, লোকাল ট্রেন, ট্রাম ও বাসের জন্য ‘ইউনিফায়েড স্মার্ট কার্ড’ চালুর কথা বলা হলেও নতুন ভাবনা অনুপস্থিত। বামেদের ইস্তাহারে দায়সারা ভাবে উড়ালপুল এবং সিএনজি ও বৈদ্যুতিক বাস চালুর কথা রয়েছে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে সড়ক ও গণপরিবহণ গুরুত্ব পায়নি বলেই অভিযোগ।
‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর অন্যতম সংগঠক রুদ্রনীল চৌধুরী বললেন, ‘‘গণপরিবহণকে বাইরে রেখে সড়ক উন্নয়নের পরিকল্পনা অবাস্তব। কলকাতার অধিকাংশ উড়ালপুলই ছোট গাড়ির জন্য তৈরি। ট্রামের মতো পরিবেশবান্ধব যান যেখানে ইউরোপে গুরুত্ব পাচ্ছে, সেখানে এ শহরে ট্রাম নিয়ে কোনও ভাবনা নেই। বিভিন্ন মেট্রোপথকে সংযুক্ত করার পাশাপাশি যে সব অঞ্চলে মেট্রো নেই, সেখানে ট্রামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।’’ সাইকেলপ্রেমী এবং একাধিক পরিবেশবাদী সংগঠনও এমন দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারস্থ হয়েছে।