পুরভোটের প্রার্থী নিয়ে ফেসবুক লাইভে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
লাগাতার ক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যেই কলকাতা পুরসভার জন্য দফায় দফায় ১২৫ ওয়ার্ডে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল কংগ্রেস। তার মধ্যে প্রার্থী বদলও হয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ, বুধবার। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য মনে করছেন, পুরভোটের টিকিট ঘিরে এখনও কংগ্রেসে অশান্তি এবং বিক্ষোভ দেখিয়ে দিচ্ছে, এখনও দলটার ‘বাজার’ রয়েছে!
প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে পুরভোটের প্রার্থী নিয়ে সোমবার দিনভর বিক্ষোভের পরে জলঘোলা হয়েছে মঙ্গলবারও। আইএনটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক নাগমা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে দলের কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন ভোটার তালিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ছিলেন মহিলা কংগ্রেসের নেত্রী-কর্মীরাও। তাঁদের অভিযোগ, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে যাঁকে প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব, তাঁর বদলে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হয়েছে। টিকিট নিয়ে ‘দুর্নীতি’ হচ্ছে বলে সরব হয়েছেন তাঁরা। বিক্ষোভ হয়েছে ৬৪ ও ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী বদলের দাবিতেও। প্রথম দু’দফার পরে সোমবার গভীর রাতে এবং এ দিন আরও দু’দফায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন ফতেমা অঞ্জুম। আগের দিনের বিক্ষোভের পরে ৭৮ ও ৭৯ নম্বরে প্রার্থী করা হয়েছে যথাক্রমে গুঞ্জা মল্লিক ও আকিব গুলজ়ারকে।
বিধানসভা ভোটে এ বার রাজ্যে শূন্যে নেমে গিয়েছে কংগ্রেস। বড়বাজার জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মহেশ শর্মা জয়ের আশায় এ বারই তৃণমূলে গিয়ে রাতারাতি শাসক দলের হয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়েছেন। তার পরেও কংগ্রেসে টানা কয়েক দিন ধরে টিকিট নিয়ে তুলকালাম চলছে। এই প্রসঙ্গে দিল্লি থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘একটা জিনিস স্পষ্ট যে, কংগ্রেসের টিকিট নিয়ে প্রতিযোগিতা আছে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ সেখানেই হয়, যেখানে বাজার থাকে। বাজার না থাকলে চাহিদা থাকে না। তার মানে কংগ্রেসের বাজার আছে!’’ প্রদেশ সভাপতির আরও বক্তব্য, তাঁদের দলে অসন্তোষ প্রকাশ করার জায়গা থাকে। কর্মী-সমর্থকেরা দলের কাছে তাঁদের দাবি, ক্ষোভ, অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন।
এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে গত বছর সোমেন মিত্র প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন তাঁকে পাঠানো অধীরবাবুর চিঠি। কোভিড-জনিত লকডাউনের আগে সেই সময়ে পুরভোটের জন্য বিরোধী শিবিরে রাজনৈতিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। সে সময়ে ‘সোমেনদা’কে অধীরবাবু চিঠি লিখে কলকাতা পুরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রার্থী করার জন্য কিছু নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁরা ওয়ার্ডে স্থানীয় ভাবে ভাল কাজ করছেন বলেই তাঁদের নাম প্রদেশ সভাপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী দলের নেতা। এখন অধীরবাবুর সভাপতিত্বে প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক ও নির্বাচন কমিটি যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে সেই পুরনো প্রস্তাবিত ৯ জনের মধ্যে ৫ জনের ঠাঁই হয়েছে। যাঁরা বাদ গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইমরান খান। তিনি প্রার্থী হতে না পারায় সেই ইমরানের সমর্থকেরা এখন বিধান ভবনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন!