প্রতীকী ছবি।
কলকাতা পুরভোটের প্রচারের সময়সীমা ফুরোতে আর দু’দিন বাকি। বুধবার পর্যন্ত রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারা শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের অর্ধেক ওয়ার্ডেও প্রচার করতে পারেননি। অথচ, বিজেপিই রাজ্যের প্রধান এবং বিধানসভার একমাত্র বিরোধী দল।
২০১৫ সালে বিজেপি যখন এ রাজ্যে এক জন বিধায়ক এবং দু’জন সাংসদের দল, তখন কলকাতা পুরভোটে তাদের সক্রিয়তা এবং ঝাঁজ অনেক বেশি ছিল বলে মনে করছেন দলের পুরনো নেতাদের অনেকেই। সে বার কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিজেপি দফতরে কর্মীদের বিরাট ভিড় ছিল। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর টিকিট-বঞ্চিতদের অনেকে ম্যাটাডোরে চড়ে বিক্ষোভ দেখাতে এসেছিলেন। সেই বিক্ষোভ থামাতে লাঠি হাতে নেমে আসতে দেখা গিয়েছিল দলের রাজ্য নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ বার কলকাতা পুরভোট পর্বে অবশ্য বিজেপি দফতরে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের ভিড় চোখে পড়েনি। প্রার্থী ঘোষণার পরও টিকিট না পাওয়া কর্মীদের বড় কোনও বিক্ষোভ দেখা যায়নি। বিজেপি এ বার কলকাতার প্রার্থীও ঘোষণা করেছে একেবারে শেষ লগ্নে।
এ বার কলকাতার ভোটে বিজেপির প্রচারেও বিশেষ হইচই নেই। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মিলে এ দিন পর্যন্ত কলকাতার অর্ধেক ওয়ার্ডেও প্রচারসভা করেননি। বিজেপি জানিয়েছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও গিরিরাজ সিংহ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী রামকৃপাল যাদব, সুভাষ সরকার, শান্তনু ঠাকুর কলকাতার ভোটে তারকা প্রচারক হিসাবে আসবেন। কিন্তু এ দিন পর্যন্ত তাঁদের দেখা মেলেনি। সুকান্ত জানিয়েছেন, তাঁরা এখানকার নেতাদের উপরে ভরসা করেই লড়ছেন।
এই পরিস্থিতির কারণ কী?
রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, কলকাতায় দলের সংগঠন দুর্বল। তার উপরে বিধানসভা ভোট এবং সাতটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দল পর্যুদস্ত হওয়ায় কর্মীদের অনেকের মধ্যেই গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। এতে দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এটা কি মাঠ ছেড়ে দেওয়ার কোনও বিশেষ কৌশল?
বিজেপির অন্য অংশের অবশ্য মত, শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাসে কর্মীরা বহু জায়গায় রাস্তায় বেরোতে পারছেন না। পাঁচ জন বিধায়ক-সহ অনেকে তৃণমূলে চলে যাওয়াতেও কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লেগেছে।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও এই পরিস্থিতির দায় চাপিয়েছেন তৃণমূলের উপরেই। তিনি বলেন, “তৃণমূল যে ভাবে ফ্লেক্স, ব্যানার, হোর্ডিং প্রভৃতি দিয়ে দেওয়াল থেকে শুরু করে আকাশ পর্যন্ত দখলদারি কায়েম করেছে, সেখানে অন্য দলের উপস্থিতি কম চোখে পড়ছে। আমাদের প্রার্থীরা এবং নেতারা একেবারে ভোটারের দরজায় দরজায় প্রচার করছেন। ৫৪ জন শহিদের রক্ত মেখে, অজস্র ঘরছাড়া কর্মীকে সঙ্গী করে ভোটে আমরা যথাসাধ্য লড়ছি। অচিরেই এই দমনমূলক রাজনীতির পরিবর্তন আমরাই করব।”
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিধানসভা ভোটের সময় শুনেছিলাম, বিজেপি বেতন দিয়ে প্রচারে লোক রেখেছিল। কিন্তু পরাজয়ের পর এ বার শুনলাম সেই ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে। আসলে ভোটে থাকতে হলে সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়। যেটা একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস পারে।”