Heritage House

KMC: নীল ফলকের ‘উচ্চাশা’ অধরাই

শহরের ঐতিহ্যশালী ভবন বা হেরিটেজ বাড়িগুলিতে ‘ব্লু প্লাক’ বা নীল ফলক লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২ ০৫:২৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

উচ্চাশা ছিল। তবে তার বাস্তবায়ন এখনও সম্পূর্ণ হল না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সামগ্রিক পরিকল্পনাতেই কোথাও ফাঁক থেকে গিয়েছে? না হলে তিন-তিন বার দরপত্র ডেকেও কেন খালি হাতে ফিরতে হল কলকাতা পুরসভাকে?

Advertisement

শহরের ঐতিহ্যশালী ভবন বা হেরিটেজ বাড়িগুলিতে ‘ব্লু প্লাক’ বা নীল ফলক লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা। ঠিক হয়েছিল, সেই ফলকে সংশ্লিষ্ট ভবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখিত থাকবে। কেন সেই ভবনটি ঐতিহ্যবাহী, তার একটা বার্তা দেওয়া হবে। দেখতে দেখতে এই পরিকল্পনা হয়েছে প্রায় দু’বছর হল। কিন্তু পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তিন বার দরপত্র ডেকেও ফলক তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যায়নি। কারণ, পর্যাপ্ত সাড়া মেলেনি। ফলে শহরের ঐতিহ্য রক্ষা নিয়ে পুরসভা হাজারো কথা বললেও সেটির প্রাথমিক যে ধাপ, অর্থাৎ জনগণের সঙ্গে শহরের ঐতিহ্যের পরিচয় ঘটানোর মাধ্যম হিসেবে সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলিতে ফলক বসানো, সেটাই এখনও সম্পূর্ণ করে ওঠা যায়নি। এক পুরকর্তার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ফের দরপত্র ডাকা হবে। চেষ্টা চলছে।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এত বার দরপত্র ডাকার পরেও কেন সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা গেল না? তা হলে কি রাজনৈতিক পরিসরে শহরের ঐতিহ্যের যে দাম রয়েছে, বাস্তব ক্ষেত্রে তার দাম নেই? না কি, সামগ্রিক পরিকল্পনার মধ্যে কোনও খামতি বা দরপত্রের শর্তে এমন কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে, যে কারণে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ওঠা যাচ্ছে না?

Advertisement

ঐতিহ্য-বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, আসলে ঐতিহ্যকে ঠিক মতো বিপণনযোগ্য করে তুলতে পারেনি পুরসভা। পুরসভা বলতে এখনও শহরবাসী পুর পরিষেবা অর্থাৎ পানীয় জল সরবরাহ, আবর্জনা সাফাই, নিকাশি ব্যবস্থা ইত্যাদি কাজগুলি বোঝেন। তার বাইরে শহরের ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে পুরসভার আলাদা ভূমিকার বিষয়টি ব্রাত্যই থেকে যায়। এমনকি, হেরিটেজ ভবনগুলি সংক্রান্ত পুর তালিকা, যেখানে ঐতিহ্যের নিরিখে সেই ভবনগুলির আলাদা ‘গ্রেডেশন’ পর্যন্ত করা রয়েছে, সেই তথ্যও জনসাধারণের কাছে ঠিক মতো তুলে ধরা যায়নি। শুধুমাত্র নির্বাচনের সময়ে ঐতিহ্য নিয়ে চাপানউতোর চলে। যা মূলত রাজ্য ও কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের পারস্পরিক তরজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু সেই গণ্ডি ডিঙিয়ে এখনও শহরের ঐতিহ্য জনসাধারণের মননে প্রবেশ করতে পারেনি।

‘‘সেই কারণেই হয়তো ঐতিহ্য রক্ষার প্রাথমিক ধাপ— যা হল সেই ঐতিহ্য সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা, বা তার মর্যাদা বোঝানোর জন্য নীল ফলক তৈরি, সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ওঠা যায়নি।’’, বলছেন এক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ।

তাঁদের আরও বক্তব্য, ঐতিহ্য নিয়ে পুরসভার অবস্থান খুব স্পষ্ট হওয়া দরকার। আর এক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘‘তবে সেটা রাজনৈতিক
নয়, প্রশাসনিক অবস্থান। শহরের ঐতিহ্য রক্ষার অভিভাবক হিসেবে পুরসভা কী করছে, এ ক্ষেত্রে সেই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে কোনও ধোঁয়াশা থাকলে সার্বিক পরিকল্পনাতেই যে ব্যাঘাত ঘটবে, তা নিয়ে সংশয় নেই।’’

পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, অনেক সময়েই বিভিন্ন প্রকল্পের দরপত্রের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এটা শুধুমাত্র নীল ফলক বসানোর ক্ষেত্রেই হয়েছে, এমন ভাবা ভুল। এক পদস্থ পুরকর্তার কথায়, ‘‘কিছু জটিলতা রয়েছে। তা দ্রুত কেটে যাবে।’’

যদিও কবে সেই জটিলতা কাটবে, কবে শহরের ঐতিহ্যবাহী ভবনে নীল ফলক বসবে, জানা নেই কারও!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement