প্রতীকী ছবি।
একসঙ্গে ৪১টি পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠল শহর ও শহরতলিতে! পুলিশের কাছে এমনই অভিযোগ জানাল কলকাতা পুরসভা। এর মধ্যে ৩৪টি পুকুর সংযোজিত এলাকা, অর্থাৎ ১০১ থেকে ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। বাকি সাতটি মূল কলকাতায়। পুর প্রশাসন মনে করছে, পুকুর ভরাটের ঘটনায় পুলিশের কারও কারও মদত রয়েছে। না-হলে একটি এলাকায় পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে, অথচ পুলিশ কিছু জানে না, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, বিষয়টি কলকাতার পুলিশ কমিশনারকেও জানানো হচ্ছে।
শহরে পুকুর ভরাটের অভিযোগ নতুন নয়। সেই বাম আমল থেকেই পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে বারংবার। যা চলেছে তৃণমূল বোর্ডের আমলেও। ২০১০ সালে তৃণমূল পুর বোর্ড গঠনের পরেও পুকুর ভরাটের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বছরখানেক আগে দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকায় একটি পুকুর ভরাটকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হলে তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও সেখানে ছুটে যেতে হয়েছিল। সেই পুকুরটি বাঁচানো গেলেও মোটের উপরে পুকুর ভরাটের প্রবণতা কমেনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার পুর প্রশাসনকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এমনকি, তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, কলকাতার পুকুরগুলির সংরক্ষণে নজর দিন। তবু পুকুর ভরাটের প্রবণতা কমেনি কেন? এর পিছনে মূলত রাজনৈতিক দাদাদের মদত রয়েছে বলেই জানিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার এক পুলিশকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘পুকুর ভরাট কোনও গোপন ব্যাপার নয়। এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা, শাসক দলের কাউন্সিলর এবং পুরসভার কিছু ইঞ্জিনিয়ার-অফিসারের যোগসাজশেই এ সব হয়ে থাকে। তাই অনেক সময়ে পুলিশ জেনেও কিছু করতে পারে না।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ৪১টি পুকুরের মধ্যে ভরাটের সব চেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডটি শাসক দলেরই দখলে। সেখানে ১০টি পুকুর ভরাটের ঘটনা ঘটেছে, যার অধিকাংশই রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার চাকদা-ঢালিপাড়া রোড, পূর্ব পুটিয়ারি, গুরুচরণ নস্কর রোডের মতো জায়গায়। গত জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে পুলিশের কাছে ওই সব পুকুর ভরাটের অভিযোগ জমা পড়েছে।
এখন অবশ্য পুকুর ভরাট রুখতে তৎপরতা বাড়াতে চায় পুর প্রশাসন। কিন্তু কেন? ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দার কথায়, সম্প্রতি লোকসভা ভোটে তৃণমূলের শক্তিক্ষয় হয়েছে। সামনে পুর ভোট। সে সব ভেবেই হয়তো পুকুর ভরাট রুখতে চাইছে পুরসভা। মেয়র বলেন, ‘‘শহরের পরিবেশ রক্ষা এখন আমাদের জরুরি কর্তব্য। তাই পুকুর ভরাট রুখতে কড়া পদক্ষেপ করতে চায় পুরসভা। পুকুর ভরাটের প্রতিটি অভিযোগ পুলিশকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’ তিনি জানান, পুর পরিষেবায় কোনও গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্ট অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারের উপরেই দায় বর্তাবে বলে ইতিমধ্যেই তাঁদের জানানো হয়েছে। আর ওই কাজে যদি পুলিশের ওসি জড়িত থাকেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।