আর্থিক বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই ‘বিমাতৃসুলভ’ আচরণের অভিযোগ তোলে রাজ্য সরকার। এ বার রাজ্য সরকারের খাদ্য সুরক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ তুলল শাসক দলেরই দখলে থাকা কলকাতা পুর প্রশাসন। শহর জুড়ে ভেজাল খাবারের রমরমা ঠেকাতে কেন্দ্র আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করলেও রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা কমিশনের টালবাহানায় তা মিলছে না বলে অভিযোগ তুলেছে তারা।
কলকাতা পুরসভার ভেজাল-বিরোধী দফতরের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পুর প্রশাসনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা কমিশন আইনবিরুদ্ধ কাজ করছে। পুরসভাকে টাকা দিচ্ছে না। এমন করলে ভবিষ্যতে পুরসভা ভেজাল প্রতিরোধের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হবে।’’ বিষয়টি পুরসভার তরফে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও জবাব আসেনি বলে জানান অতীনবাবু। কলকাতা পুরসভা যে হেতু পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন, তাই তাদের গোচরেও সমস্যাটি আনা হয়েছে। ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুর প্রশাসনের বক্তব্য যুক্তিযুক্ত।’’
বর্তমানে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে রয়েছে ভেজাল প্রতিরোধের দল। শহরের বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁর খাবারে ভেজাল মেশানো হচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ আসে। রেস্তোরাঁর বিরিয়ানি, কাটলেট থেকে ফুটপাথের এগরোল, মোমো বা বোতলবন্দি পানীয়— ভেজালের রমরমা সর্বত্রই। পুরসভার ওই দফতর সেই ভেজাল ধরারই কাজ করে। পুরসভা সূত্রের খবর, খাবারে ভেজাল রুখতে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট অব ইন্ডিয়া’ নামে আইনটি চালু হয়েছে ২০০৬ সালে। নতুন ওই আইন অনুযায়ী শহরের প্রতিটি খাবারের দোকানকেই বিধি মেনে লাইসেন্স নিতে হবে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, ফুড লাইসেন্স-ফি বাবদ বছরে সাত কোটিরও বেশি টাকা আয় করে পুরসভা। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মানুযায়ী তা জমা করতে হয় রাজকোষে। অতীনবাবুর কথায়, ‘‘ওই টাকা তুলে দেওয়া হলেও বছরভর ভেজাল প্রতিরোধের যে অভিযান আমরা চালাই, সে বাবদ খরচ দেওয়া হচ্ছে না। যে হেতু পুরসভার ভেজাল দফতর রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা কমিশনের অধীনে। আমরা ওঁদের বারবার চিঠি দিয়ে বলেছি, খরচের টাকা দিন। কিন্তু ওঁরা তা দিচ্ছেন না।’’
অতীনবাবুর অভিযোগ, ‘‘গত আর্থিক বছরে ভেজাল প্রতিরোধের জন্য দু’কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বাজেটও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু খাদ্য সুরক্ষা কমিশন তাতেও কান দেয়নি। তারা উল্টে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ওই বাজেট-প্রস্তাব পাঠাতে বলে।’’ অথচ, কেন্দ্রের আইনে স্পষ্ট বলা রয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ খাদ্য সুরক্ষা কমিশন বাজেট পাঠাবে রাজ্যকে। আর রাজ্য তা পাঠাবে কেন্দ্রের কাছে। কিন্তু ওদের টালবাহানায় টাকা মিলছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শাসক দলেরই এক পুরবোর্ডের এই অভিযোগকে ঘিরে অস্বস্তিতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ওই দফতরের এক অফিসার জানান, সংবিধানের ৭৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, কর বাবদ টাকা তোলা হলে ওই এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে তা দিতে হবে। তাই পুরসভাকে ভেজাল প্রতিরোধে টাকা দেওয়া উচিত। সূত্রের খবর, ১৪৪টি ওয়ার্ডে ভেজাল প্রতিরোধের কাজ করতে ৩৮ জন খাদ্য সুরক্ষা অফিসার থাকা জরুরি। আছেন মাত্র ১৩ জন। অভিযানের জন্য গাড়ি, পরিকাঠামো বা নিচু স্তরের কর্মী—কিছুই নেই। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা কমিশনার গোধূলি মুখোপাধ্যায়কে ফোন ও এসএমএস করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, পুরসভার তোলা টাকা জমা পড়ে অর্থ দফতরে। খাদ্য সুরক্ষা কমিশন টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পুরসভাকে। তবে এখনও তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।