ফারাকের এই অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও।
শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের তথ্যে কি ফের গরমিল? কলকাতা পুরসভার দেওয়া ভিন্ন তথ্য নিয়ে এমনই অভিযোগ সামনে এসেছে। এমনকি, শহরে ডেঙ্গি-মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মেয়রের কথার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানেও গরমিল ধরা পড়েছে। যার ভিত্তিতে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, ফের তথ্য গোপনের ‘চেনা’ পথেই হাঁটছে পুরসভা।
তথ্যে ফারাকের এই অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘পুরসভার দেওয়া তথ্যে কোথাও ভুল আছে। কিছু তো সমস্যা হচ্ছে। পুরসভার আরও সতর্ক হয়ে কাজ করা দরকার।’’
গত সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর মেয়র ফিরহাদ হাকিম পুর ভবনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘আমাদের হিসাবে শহরে তিন জন ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন।’’ অথচ সেই দিন পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা সাত ছিল বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
অন্য দিকে ১৫ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার পুর ভবনের অধিবেশন-কক্ষে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘কলকাতার জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ। তাঁদের মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৯০০ পেরোয়নি।’’ পরিসংখ্যানের ফারাকটা কোথায়? নজর দেওয়া যাক গত ৭ সেপ্টেম্বরের তথ্যে। যেখানে পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস পুর স্বাস্থ্য দফতরকে দেওয়া পরিসংখ্যানে জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ অগস্ট পর্যন্ত শহরের ২৪টি ওয়ার্ডে (ডেঙ্গির সংক্রমণ বেশি এই ওয়ার্ডগুলিতে) ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১১৩ জন।
কলকাতা পুর এলাকায় মোট ওয়ার্ড ১৪৪টি। বাকি ১২০টি ওয়ার্ড ধরলে মুখ্য পতঙ্গবিদের দেওয়া ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিসংখ্যান অনেকটা বাড়বে বলেই মত পুর স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের। পুর স্বাস্থ্য দফতরকে মুখ্য পতঙ্গবিদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে এখানেই ফারাক অতীনের দেওয়া তথ্যের। যা নিয়ে বিস্মিত দফতরের চিকিৎসকেরাও। পুর আধিকারিকদের একাংশের দাবি, পুরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন মুখ্য পতঙ্গবিদ। পরিসংখ্যানের এই ফারাক দেখে বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভা সমালোচনা ঢাকতে ডেঙ্গি আক্রান্তের আসল তথ্য চাপা দিচ্ছে।
অভিযোগ, তথ্য গোপনের চেষ্টার উদাহরণ আছে আরও। গত মঙ্গলবার বাগবাজারের নিবেদিতা পার্কে অস্থায়ী পুনর্বাসন কেন্দ্রের এক মহিলা বাসিন্দা ডেঙ্গিতে মারা যান। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শয্যা না থাকায় তিনি দু’টি হাসপাতাল ঘুরে বরাহনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই মারা যান। কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরী ওই মহিলার মৃত্যু প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘ওই মহিলা যে হাসপাতালে মারা গিয়েছেন, সেটা কলকাতায় নয়। সবটা কলকাতার ঘাড়ে চাপালে হবে না। কলকাতায় মৃত্যু না হলে পুরসভাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই।’’ পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক মহিলা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও মেয়র ও মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দাবি করেছিলেন, প্রথমে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে প্লেটলেট কমার পরে তা বেড়ে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘পুরসভা দোষ ঢাকতেই ডেঙ্গিতে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা কমাচ্ছে। আসল সত্য বেরিয়ে আসবেই।’’ কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক বলেন, ‘‘তথ্য লুকোলে আখেরে মানুষেরই ক্ষতি।’’ অভিযোগ প্রসঙ্গে অতীন ঘোষকে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি, মেসেজেরও উত্তর দেননি।