—প্রতীকী চিত্র।
দেশের সব থেকে নিরাপদ শহর হিসাবে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। অথচ সেখানেই মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণের পরিসংখ্যান রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে। নথিভুক্ত এমন অপরাধের সংখ্যার নিরিখে প্রথম স্থানে থাকা বেঙ্গালুরুর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে এই শহর। সদ্য প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর (এনসিআরবি) ২০২২ সালের রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই তথ্য।
এনসিআরবি-র ২০২২ সালের রিপোর্টেও দেশের সব থেকে নিরাপদ শহরের তকমা ধরে রেখেছে কলকাতা। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় দণ্ডবিধি মাফিক অপরাধের সংখ্যা কমেছে এই শহরে। ২০২১ সালে যেখানে ১৩০৬৭টি অপরাধের অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছিল, সেখানে ২০২২ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১১০৩৮টি। কলকাতায় প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার নিরিখেও অপরাধের গড় হার অন্য শহরগুলির তুলনায় অনেক কম।
তবে, মোট অপরাধের সংখ্যা কমলেও মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণের অভিযোগ (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪এ ধারা) দায়েরের ক্ষেত্রে দেশের অন্য শহরগুলিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে ‘নিরাপদ’ কলকাতা। ২০২২-এর রিপোর্টে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪এ ধারায় শীর্ষে রয়েছে বেঙ্গালুরু। সেখানে সারা বছরে মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণের ২২টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে জয়পুরের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে রয়েছে কলকাতা! কারণ, শুধু এই শহরেই গোটা বছরে ১১টি অপহরণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। ভুক্তভোগীর সংখ্যাও ১১। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলিতে অবশ্য মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণের অভিযোগের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম— যথাক্রমে ৭ এবং ২। উল্লেখযোগ্য ভাবে, উত্তরপ্রদেশের দু’টি শহর গাজিয়াবাদ ও লখনউয়ে এমন অপরাধের সংখ্যা শূন্য।
তবে শুধু মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণই নয়। কলকাতা শহরে এখনও বন্ধ হয়নি পণের জন্য মৃত্যু। ২০২২ সালের এনসিআরবি-র রিপোর্টে পণের জন্য মৃত্যু সংক্রান্ত চারটি নথিভুক্ত ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এই অপরাধে তালিকার শীর্ষে রয়েছে দিল্লি। সেখানে নথিভুক্ত এমন অপরাধের সংখ্যা ১২৯। লখনউ এবং বেঙ্গালুরুতে পণের জন্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৪৩ এবং ২৯টি।
সদ্য প্রকাশিত এনসিআরবি-র রিপোর্টে শহরে অপরাধের সংখ্যা কম হওয়াকে লালবাজারের পুলিশকর্তারা অবশ্য বাহিনীর সাফল্য হিসাবেই দেখছেন। সর্বদা নজরদারি, অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই অন্য শহরের তুলনায় তিলোত্তমা কলকাতায় অপরাধের সংখ্যা অনেকটা কমেছে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
যদিও মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণ কেন অন্য শহরগুলির থেকে কলকাতায় বেশি, সেই প্রসঙ্গে লালবাজারের কর্তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। এক কর্তা শুধু বলেন, ‘‘এত কোটি জনসংখ্যার এই শহরে অপরাধ পুরোপুরি শূন্যে নামিয়ে আনা বাস্তবে সম্ভব নয়।
তবে অপরাধ কমাতে সর্বদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে যে ক্ষেত্রে খামতি নজরে আসবে, অবশ্যই সেই অপরাধের সংখ্যা কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’