political clash

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এখনও আতঙ্কে কামারহাটি

আনোয়ারের দাবি, ‘‘আমাদের কেউ গোলমালে জড়িত নন। কালামউদ্দিনের দল এলাকায় জুলুম চালাচ্ছে। সাক্ষ্য দিতে গেলে হুমকি দিচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে মানুষ সেটাই প্রতিবাদ করায় কাউন্সিলরের লোক তাণ্ডব চালায়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৬
Share:

থমথমে: বন্ধ দোকানপাট। এলাকায় চলছে পুলিশি টহল। শনিবার, কামারহাটিতে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বাইরে তখন মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছে। সঙ্গে গুলি। বাড়ির ছাদের কার্নিসে বোমা ফাটতেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল চারদিক। দোতলার ঘরে তখন দু’মাসের শিশুকে কোলে চেপে ভয়ে কাঁপছিলেন তরুণী মা।

Advertisement

কামারহাটির রোজেনবাগান এলাকার বাসিন্দা শুধু ওই তরুণীর পরিবারই নয়। শুক্রবার বিকেল
থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই গোষ্ঠীর এলাকা দখলের লড়াইয়ের পরে শনিবারও আতঙ্কে কাটল কামারহাটির বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। এলাকায় বসেছে পুলিশ পিকেট, চলছে র‌্যাফের টহলদারি। বন্ধ স্কুল, গ্রন্থাগার, দোকান-বাজার। আতঙ্কে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন না কেউ।

এ দিন নতুন করে অশান্তি ছড়ায়নি। তবে স্থানীয়দের আতঙ্ক কাটাতে প্রচারের পাশাপাশি দাশুবাগান, ম্যাকেঞ্জি রোড, রোজেনবাগান, ছাই ময়দানের মূল রাস্তা, অলিগলিতে বাহিনী নিয়ে টহল দেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে অশান্তি হয়নি। পুরনো শত্রুতার জেরে এই গোলমাল। শনিবার সকাল থেকে তল্লাশি চালিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে। দু’টি অভিযোগ করেছেন স্থানীয়েরা। বোমার স্‌প্লিন্টারের আঘাতে এক পুলিশ কর্মীর কানে ও এক বাসিন্দা পায়ে আঘাত পেয়েছেন।

Advertisement

রোজেনবাগানের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর সৌকত আলির ছেলে আখতার জানান, গোলমালের সময়ে ছাদে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সাহানা খাতুন। আচমকাই ছাদ লক্ষ্য করে বোমা ছুড়লে আগুনের ঝলকানি সাহানার চোখে লাগে। তাঁর কথায়, ‘‘দোতলার ঘরে তখন দু’মাসের বাচ্চা ছিল। ভয় হচ্ছিল, গুলি-বোমার আঘাতে জানলার কাচ ভেঙে না ঘরে ঢুকে যায়। পরে ছাদেও গুলির খোল মেলে।’’ কিছুটা দূরেই ম্যাকেঞ্জি রোডে এ দিনও রাস্তায় পড়ে ছিল পোড়া বাইকের ছাই। পাশেই এক জায়গায় বোমার দাগ দেখিয়ে এক দোকানদার বলেন, ‘‘বাজারে আসা এক যুবকের বাইক ফেলে কয়েক জন আগুন ধরায়। ভয়ে শাটার নামিয়ে দিয়েছিলাম।’’

ছোট ছাই ময়দানের কাছেই সরকারি গ্রন্থাগারের একতলায় মাধ্যমিক পড়ুয়াদের অবৈতনিক আবাসিক কোচিং চলে। সেখানকার সদস্য আকবর আলি বলেন, ‘‘ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ভিতরে তখন ৩০ জন ছেলেমেয়ে ছিল। রাতে পুলিশ এসে সকলকে উদ্ধার করে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে চেয়ারম্যান পারিষদ কালামউদ্দিন আনসারির পুরনো বিবাদ রয়েছে। কিছু দিন আগে স্থানীয় এক যুবক ওই কাউন্সিলরের অফিসের কাছেই খুন হন। শুক্রবার ব্যারাকপুর আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিল ওই যুবকের পরিবার। অভিযোগ, তাদের হুমকি দেয় কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠেরা। তা নিয়েই দু’দলের ঝামেলা লাগে। আনোয়ারের দাবি, ‘‘আমাদের কেউ গোলমালে জড়িত নন। কালামউদ্দিনের দল এলাকায় জুলুম চালাচ্ছে। সাক্ষ্য দিতে গেলে হুমকি দিচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে মানুষ সেটাই প্রতিবাদ করায় কাউন্সিলরের লোক তাণ্ডব চালায়।’’

অন্য দিকে, কালামউদ্দিনের দাবি, ‘‘আমি রাজনীতির লোক, অনৈতিক কাজে যুক্ত নয়। আনোয়ারের সঙ্গে ঝামেলার ব্যাপার নেই। কে গোলমাল পাকাচ্ছে বলতে পারব না। আনোয়ারের দল আমাদের উপরে প্রথমে আঘাত করেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement