আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে হাই কোর্ট চত্বরেই মেজাজ হারাতে দেখা গেল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডে সুবিচার চেয়ে পথে নেমেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবীরা। রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সব পক্ষের আইনজীবী যোগ দিয়েছিলেন সেই মিছিলে। ছিলেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও। কিন্তু মিছিলের শেষ পর্যায়ে আচমকাই মেজাজ হারালেন কল্যাণ। হাই কোর্ট চত্বরে এক আইনজীবীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় তাঁর। শেষে অন্য আইনজীবীরা এসে কল্যাণকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
সোমবার দুপুরে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরেই মিছিল করেন আইনজীবীরা। শান্তিপূর্ণ সেই মিছিল আদালত চত্বর ঘুরে আবার হাই কোর্টে ফিরে আসার সময়েই ঘটনার সূত্রপাত। আরজি করের ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছু মন্তব্য করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন । তা নিয়ে আপত্তি তোলেন কল্যাণ। বিকাশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনায় আমরাও দুঃখিত, আমরাও বিচার চাই। কিন্তু কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমের কাছে অসত্য তথ্য দিচ্ছেন। তাঁর কাছে যদি সঠিক তথ্য থাকে তবে তিনি সিবিআইকে দিন। সংবাদমাধ্যমকে দিচ্ছেন কেন?’’ এর পাশাপাশি সিবিআই তদন্তে দেরি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ‘‘পরে বিকাশের এক অধস্তন আইনজীবীও সংবাদমাধ্যমে আরজি কর নিয়ে মন্তব্য করায় কল্যাণ তাঁকে প্রকাশ্যেই বাধা দেন। এই নিয়ে আদালত চত্বরে দু’জনের মধ্যে বচসা বাধে। যা দ্রুত ধাক্কাধাক্কি এবং হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়। এই পরিস্থিতিতে মিছিলে উপস্থিত অন্য আইনজীবীরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। কল্যাণকে সরিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।
তবে কল্যাণের ওই ঘটনাটি ছাড়া, সোমবার শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিছিল হয়েছে আইনজীবীদের। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং জয়ন্ত মিত্র। দু’জনে মমতার শাসনকালেই রাজ্যের এজি ছিলেন। কিন্তু মমতার সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে পদ থেকে ইস্তফা দেন। সোমবার ওই দুই প্রাক্তন এজি আইনজীবীদের মিছিলে যোগ দেন। এ ছাড়া ছিলেন, আইনজীবী প্রতীক ধর, অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দ্য মিত্র, বিকাশরঞ্জন, কল্যাণ এবং রাজ্যের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য কল্যাণের পুত্র শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছা়ড়া ছিলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সমস্ত সদস্য। ছিলেন বার লাইব্রেরি এবং ইনকর্পোরেট ল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরাও।
মিছিলে আরজি করে নিহত মহিলা চিকিৎসকের জন্য সুবিচারের পোস্টারের পাশাপাশি রাজ্য সরকার বিরোধী পোস্টারও ছিল। তবে আইনজীবীরাই জানিয়ছেন, সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা হাই কোর্টে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে আইনজীবীদের এত বড় মিছিল দেখা যায়নি। যেখানে একই সঙ্গে একই দাবিতে পা মেলাচ্ছেন রাজ্যের শাসকদলের সাংসদ তথা আইনজীবী এবং বিরোধী পক্ষের বিশিষ্ট আইনজীবীরাও।