Kalipuja

করোনা-কালে মণ্ডপ নিয়ে কড়াকড়ি কালীপুজোতেও

সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের সব চেয়ে বড় মাথাব্যথা মণ্ডপের অবস্থান নিয়ে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪৭
Share:

রুদ্ধ: অন্য বছর এই সরু রাস্তা আটকেই হয় ফাটাকেষ্টর পুজো। সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুর্গাপুজোর পরে এ বার করোনা পরিস্থিতির জেরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে কালীপুজোর মণ্ডপ তৈরি ঘিরেও। পুজোর বারো দিন আগেও তাই শহরের বড় পুজোগুলিতে সে ভাবে প্রস্তুতি শুরু হয়নি। দুর্গাপুজোয় কী ভাবে মণ্ডপ তৈরি করতে হবে, তা নিয়ে প্রশাসনের তরফে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পরে পুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টও বিধিনিষেধ জারি করে। এ ক্ষেত্রে তেমন নির্দেশিকা এখনও আসেনি। পরে মণ্ডপ ভাঙতে হতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকেও দেরিতে কাজ শুরু করতে চাইছে তারা। এ ছাড়া, কালীপুজোতেও মণ্ডপে দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে কি না, বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে তা নিয়ে।

Advertisement

সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের সব চেয়ে বড় মাথাব্যথা মণ্ডপের অবস্থান নিয়ে। পোশাকি নাম নব যুবক সঙ্ঘ হলেও বেশির ভাগ লোক এটি ফাটাকেষ্টর পুজো নামেই চেনেন। প্রতি বার কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট থেকে সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে ঢুকে এই পুজো দেখতে হয়। প্রতিমার মঞ্চ থেকে কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট পর্যন্ত গোটা রাস্তা ঢেকে তৈরি হয় মণ্ডপ। দর্শনার্থীদের বার করা হয় প্রতিমার মঞ্চের তলার জায়গা দিয়ে। পুজোর কয়েক দিন ওই রাস্তাই যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন পাড়ার বাসিন্দারা। এ বারও সে ভাবেই মণ্ডপের কাজ শুরু হয়েছে। আর তা নিয়েই ধন্দে পড়েছেন পাড়ার বাসিন্দারা।

মণ্ডপে দর্শনার্থীর প্রবেশ যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তা হলে প্রতিমার মঞ্চের নীচে ফাঁকা জায়গা দিয়ে পাড়ার লোকজন যাতায়াত করবেন কী করে? পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রবন্ধ রায় বললেন, ‘‘এটা বড় সমস্যা। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পাড়ার লোকেদের কার্ড দেওয়া যায় কি না, দেখছি। এ ছাড়া উপায়ও নেই।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজ খোলার ভাবনা, রাজ্যে ছাড় মিলল বেশ কিছু ক্ষেত্রে​

শুধু এই পুজোই নয়, মণ্ডপের অবস্থান ঠিক করতে শহরের বেশির ভাগ গলিপথের কালীপুজো কমিটিই হিমশিম খাচ্ছে। কোন পথে পাড়ার লোকেরা যাতায়াত করবেন, কোন দিকে মুখ করে প্রতিমা বসালে ভাল ভাবে ভিড় এড়ানো যাবে— তা উদ্যোক্তারা ভেবেই পাচ্ছেন না। কিছু পুজো কমিটির আবার দাবি, রাস্তা আটকে যে পুজোগুলি হয়, তাদের এখনই মণ্ডপ তৈরির কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে পুলিশের তরফে। বলা হয়েছে, কী ভাবে খোলামেলা মণ্ডপ করে ভিড় এড়ানো যায় এবং করোনা রোধে কী কী ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে তা আগে থানাকে জানাতে হবে। এই সব ঝক্কির জেরে মণ্ডপ তৈরিতে হাতই দেয়নি বেশির ভাগ পুজো কমিটি।

বাগমারি বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের কালীপুজোর এ বার ৯৯তম বছর। প্রতি বার এই সময়ে রাস্তা আটকে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। যানজট সামলাতে মোতায়েন করতে হয় বাড়তি পুলিশ। কিন্তু এ বার সেখানে বাঁশই পড়েনি। উল্টে পুজো কর্তারা ফ্লেক্স টাঙিয়ে লিখে দিয়েছেন, আগামী বছর শতবর্ষের পুজোর জন্য তৈরি হোন! পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা কিশোর ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ এখনও মণ্ডপের অনুমতি দেয়নি। রাস্তায় হয়, এমন সব বড় পুজোরই নাকি একই অবস্থা।’’ অন্য বছর কাঁকুড়গাছিতে বিধায়ক পরেশ পালের পুজোর জন্য পৃথক রাস্তা দিয়ে গাড়ি বার করার ব্যবস্থা করে পুলিশ। এ বার মণ্ডপের কিছুই হয়নি। পরেশবাবুর দাবি, ‘‘করোনার জন্য সব দিক দেখে দেরিতে শুরু করছি। পুলিশ শুধু একটু দেখে করতে বলেছে।’’

মণ্ডপ নিয়ে নাজেহাল চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘ, খিদিরপুর সর্বশ্রী সঙ্ঘ বা হরিদেবপুর নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোক্তারাও। টালিগঞ্জের মুর অ্যাভিনিউয়ের রসা শক্তি সেবক সঙ্ঘের পুজোর কর্তা জিৎ রায়ের আবার দাবি, ‘‘শ্মশানের থিম ভেবেছি। কিন্তু থিম করব কোথায়, জানি না। পুজো ফাঁকা জায়গায় হলেও রাস্তার পুজো নিয়ে এ বার পুলিশ খুব কড়াকড়ি করেছে। বলেছে, পাড়ার লোকের সমস্যা করে কিছু করা যাবে না।’’

আরও পড়ুন: অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লোকাল চালানোর ভাবনা, টাইম টেবল প্রকাশ শীঘ্রই​

কলকাতা পুলিশের তরফে কেউ মন্তব্য করতে না চাইলেও লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘রাস্তা আটকে এ বার মণ্ডপ করা যাবে না। সব করোনা-বিধিও মেনে চলতে হবে। কমিটিগুলিকে সেটাই জানানো হয়েছে।’’

সোমেন মিত্রের (ছোড়দা) পুজো নামে পরিচিত আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তা বাদল ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘এ বার রাস্তা আটকে বাড়াবাড়ি না করাই ভাল। শুধু পুজোটা হোক, উৎসব পরের বছর থেকে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement