আরাধনা: সল্টলেকের মৈত্রী সঙ্ঘের কালী প্রতিমা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
কোথাও ১২০ ফুট লম্বা মণ্ডপের মাথার পুরোটাই টিন দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কোথাও আবার প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিকের বরাত দেওয়া হয়েছে প্রতিমার মাথা বাঁচাতে। মাঠে পুজো হয়, এমন বহু জায়গায় আবার কাদা এড়াতে অন্তত ছ’ইঞ্চি উঁচু চৌকি পেতে মাঠ ঢেকে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের মতো নিচু এলাকায় আবার মাঝেমধ্যেই পুজোকর্তাদের ফোন যাচ্ছে স্থানীয় পুর প্রতিনিধিদের কাছে। বক্তব্য একটাই, ‘‘সব ভেসে যাবে না তো? জল যাতে দাঁড়িয়ে না যায়, শুধু সেটা নিশ্চিত করুন।’’
দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজোতেও বৃষ্টি ভাসাতে পারে ধরে নিয়ে এ ভাবেই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন বহু উদ্যোক্তা। তাঁদের আতঙ্ক বাড়িয়েছে হাওয়া অফিসের ঘোষণা। সেই ঘোষণায় জানানো হয়েছে, আন্দামান সাগরের ঘূর্ণাবর্তটি শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বৃহস্পতিবার। আগামী কয়েক দিনে সেটি শক্তি বাড়াতে বাড়াতে বঙ্গোপসাগরে আসবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, কালীপুজোর দিন সেটি নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং ওড়িশা উপকূলের গা ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলে হাজির হবে। তবে, কোথায় ও কবে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি হওয়া অফিস। তবে এর জেরে কলকাতায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাতেই আতঙ্কে ভুগছেন কালীপুজোর উদ্যোক্তারা।
মধ্য কলকাতার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের যেমন সব চেয়ে বড় মাথাব্যথা মণ্ডপ এবং প্রতিমার মাথা বাঁচানো। পোশাকি নাম নব যুবক সঙ্ঘ হলেও বেশির ভাগ লোক এটি ফাটাকেষ্টর পুজো নামেই চেনেন। প্রতি বারই কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট থেকে সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে ঢুকে এই পুজো দেখতে হয়। প্রতিমার মঞ্চ থেকে কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট পর্যন্ত গোটা রাস্তা ঢেকে তৈরি হয় মণ্ডপ। উঁচু করে মঞ্চ তৈরি করে তাতে প্রতিমা বসানো হয়। মঞ্চের নীচ দিয়ে দর্শনার্থীদের বেরোনোর পথ রাখা হয়। এ বারও সে ভাবেই মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। এই পুজোর কর্তা প্রবন্ধ রায় ওরফে ফান্টা বললেন, ‘‘১২০ ফুট লম্বা মণ্ডপ যাতে ভাল টিন দিয়ে ঢাকা থাকে, তাতে জোর দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, বড় বড় প্লাস্টিক আনিয়ে রাখা হয়েছে। দরকার হলেই ব্যবহার করা হবে।’’ একই দাবি সোমেন মিত্রের (ছোড়দা) পুজো নামে পরিচিত আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের। সেখানকার কোষাধ্যক্ষ বাদল ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘উঁচুতে আমাদের মণ্ডপ তৈরি হয়। এ বারও অন্তত ছ’ফুট উঁচুতে যাতে মণ্ডপ হয়, তেমন কাজ করিয়েছি। তবে আমহার্স্ট স্ট্রিটে বৃষ্টি হলেই জল দাঁড়িয়ে যায়। হয়তো কারও কিছু করার নেই। তবু কাউন্সিলরদের বার বার বলছি, বৃষ্টি হলে জল দ্রুত বার করে দেওয়াটা যেন নিশ্চিত করা যায়।’’
চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘ, খিদিরপুর সর্বশ্রী সঙ্ঘ বা হরিদেবপুর নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোক্তারা আবার বেশি চিন্তিত মণ্ডপের কাঠামো কী ভাবে আরও শক্তপোক্ত করানো যায়, তা নিয়ে। টালিগঞ্জের মুর অ্যাভিনিউয়ের রসা শক্তি সেবক সঙ্ঘের এক পুজোকর্তাও বললেন, ‘‘প্রচুর প্লাস্টিক আনিয়েছি। তবে তার থেকেও বেশি জোর দিয়েছি মণ্ডপের কাঠামো শক্তপোক্ত করার ব্যাপারে। তেমন কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’ একই রকম দাবি উত্তর কলকাতার এক মন্ত্রীর বাড়ির সামনে হওয়া বাগমারি বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের। সেখানকার পুজোকর্তা কিশোর ঘোষ বললেন, ‘‘এমন ভাবে মণ্ডপ বেঁধেছি যে, সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ বেলেঘাটার একটি কালীপুজোর প্রধান, বিধায়ক পরেশ পাল বললেন, ‘‘২০ ফুট বাই ২০ ফুটের প্রায় ৫০০ প্লাস্টিক আনানো আছে। বৃষ্টি তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। মণ্ডপটাও কষে বাঁধা হয়েছে।’’
বৌবাজারের ৪৮ পল্লি যুবশ্রীর কালীপুজো-কর্তা, বিধায়ক তাপস রায় যদিও বললেন, ‘‘সকলেই ব্যবস্থা তো নিচ্ছি, কিন্তু গত কয়েক বছরে ঝড়-বৃষ্টির যা চেহারা দেখা যাচ্ছে, তাতে তেমন কিছু হলে মণ্ডপের কাঠামো তা সহ্য করতে পারবে কি না, কে জানে! মাথায় রাখতে হবে, বড় বিপদ এলে নিজেকে ও অন্যদের মণ্ডপ থেকে দূরে রাখতে হবে। জীবন একটাই, কালীপুজো অনেক হবে।’’