বেপরোয়া: কালীপ্রতিমা বিসর্জনের সময়ে মাস্কহীন মানুষের ভিড়। রবিবার, হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দু’দিনের ছাড়ের পরে ফের শুরু হয়েছে নৈশ কার্ফু। তার মধ্যেই শনি এবং রবিবার চলল কালী প্রতিমা নিরঞ্জন। তবে কার্ফুর মধ্যেই বিসর্জন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে নরমে-গরমে এলাকা ফাঁকা করিয়ে দায়িত্ব সামলানোর পথেই হাঁটল পুলিশ। কিছু ক্ষেত্রে বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে রুজু হল মামলা। উৎসবের মরসুম জুড়ে চলতে থাকা নিয়ম ভাঙার এই খেলা তবু বদলাল না বিসর্জনের শেষ দিন রবিবারেও।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর শহরে ৮০৩০টি কালীপুজো হয়েছিল। এ বছরও পুজোর সংখ্যা আট হাজারের আশপাশে। প্রথম দিন শহরের বিভিন্ন ঘাটে প্রায় তিন হাজার কালী প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। শনিবার হয়েছে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি। রবিবার রাত পর্যন্ত বাকি চার হাজার প্রতিমার নিরঞ্জন হয়ে গিয়েছে বলে খবর। সব চেয়ে বেশি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে বাবুঘাটে। এ ছাড়া হয়েছে জাজেস ঘাট এবং নিমতলা ঘাটে। যাদবপুর, টালিগঞ্জ বা গার্ডেনরিচের কয়েকটি জলাশয়েও দিনভর বিসর্জন-পর্ব চলেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার বিপুল সংখ্যক প্রতিমা নিরঞ্জনের চাপে সন্ধ্যার পরে ব্যাপক যানজট তৈরি হয় গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন এলাকাগুলিতে। শোভাযাত্রার ভিড়ে অরবিন্দ সরণি হয়ে খন্না, উল্টোডাঙা পর্যন্ত গাড়ির গতি শ্লথ হয়ে যায়। তবে বেশি চাপ ছিল বিডন স্ট্রিট এবং রবীন্দ্র সরণির কিছু অংশে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে রাস্তা আটকে বক্স বাজিয়ে বিসর্জনমুখী জনতার নাচে। যদিও শোভাযাত্রায় শামিল জনতার মধ্যে অন্য দিনের তুলনায় বাজি ফাটানোর উৎসাহ এ দিন ছিল কিছুটা কম। অবশ্য এক পুলিশকর্মীর দাবি, ‘‘শোভাযাত্রা বড় রাস্তায় পৌঁছলে কিছু করা হচ্ছে না। কিন্তু পাড়ার গলিঘুঁজিতে ঘোরার সময়ে দেদার বাজি ফাটানো হচ্ছে। ওই পর্যন্ত নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো সত্যিই নেই। সেই সুযোগই নিচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ।’’
এই ভিড় সামলাতে নাজেহাল পুলিশকেই আবার রাত ১১টার পরে নামতে হয় নৈশ কার্ফু বলবৎ করার কাজে। শনিবার রাতেও বড় পুজো মণ্ডপগুলি প্রতিমা রেখে দেয়। দ্রুত দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ করার জন্য পুলিশকে রাত ১১টার পরেও পুজো কমিটিকে বলতে হয়। তা সত্ত্বেও রাত দুটো-তিনটে পর্যন্ত উৎসবমুখী জনতার ভিড় দেখা গিয়েছিল আমহার্স্ট স্ট্রিট, কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট বা দমদম রোডে। বেশির ভাগই মাস্ক পরে ছিলেন না। অভিযোগ, করোনা সতর্কতা উড়িয়ে রাস্তায় দেদার চলছে খাওয়াদাওয়া।
রাত বাড়লেও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না দেখে এক সময়ে কড়া হওয়ার নির্দেশ আসে পুলিশের কাছে। প্রিজ়ন ভ্যান নিয়ে বড় পুজো মণ্ডপগুলির সামনে থেকে ধরপাকড় শুরু হয়। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এমনই পদক্ষেপে শনিবার সারা দিনে শহর থেকে ১৩ কেজি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় দশ লিটার মদ। সারা দিনে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ১৪৫ জন বিধিভঙ্গকরীকে। ট্র্যাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নেয়িয়েছে ৪৯১ জনের বিরুদ্ধে। নিয়ম ভাঙার এই রোজনামচাই কি দেখা যাবে ছট পুজোয়? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।