কালীপুজোর রাতে ধোঁয়ামুক্ত কলকাতা। —নিজস্ব চিত্র।
দূষণ নিয়ে বার বার সতর্ক করেও কাজ হয়নি। কিন্তু কোভিড আতঙ্ক সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাল। কালীপুজোর রাতে কার্যত বিষমুক্তই রইল কলকাতার বাতাস। তাই উৎসবের রাতে বহু দিন পর প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারলেন শহরবাসী। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছে।
উৎসবের মরসুমে প্রতিবছরই শহর কলকাতার বাতাসের গুণমান অনেকটাই নেমে যায়। অতিমারি পরিস্থিতিতে তাই এ বারে কালীপুজো নিয়ে বিশেষ ভাবে চিন্তিত ছিলেন সমাজকর্মীরা। হাইকোর্ট বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করলেও, সাধারণ মানুষ সেই নিষেধাজ্ঞা কতটা মানবেন তা নিয়ে ধন্দ ছিল সর্বত্রই।
তবে আদালতের নির্দেশ যে একেবারেই লঙ্ঘিত হয়নি, তা নয়। বরং, শনিবার রাতের দিকে একাধিক জায়গায় বাজি পোড়ানোর ঘটনা সামনে এসেছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনা বাদ দিলে, কালীপুজোর রাতে শহর মোটামুটি উপদ্রবহীন ছিল বলেই দাবি প্রশাসনের।
আরও পড়ুন: বাজি ফাটলই, ব্যর্থতার দায় কি শুধু পুলিশের?
রবিবার পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সূচকে দেখা গিয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কলকাতার আকাশ শুধু ধোঁয়ামুক্তই থাকেনি, শহরে দূষণ সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করেনি। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যাতিক্রম বিটি রোডে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা। কালীপুজোর রাতে সেখানে বাতাসের গুণগত সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ২৫১ ছিল।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
একিউআই ২০১ থেকে ৩০০-র মধ্যে থাকলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই নিরিখে রবীন্দ্রভারতী সংলগ্ন এলাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর। গত বছর তুলনামূলক ভাবে সেখানে বাতাসের গুণমান ভাল ছিল। ২০১৯-এর ২৭ অক্টোবর ওই এলাকায় একিইউআই ১৮৭ ছিল। তবে গত বছর ওই এলাকায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা বা সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম ১০) যেখানে প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ ১৬৫৭.৭০ মাইক্রোগ্রাম ছিল, এ বারে তা ৩১৩.২০-তে নেমে এসেছে।
রবীন্দ্রভারতী সংলগ্ন এলাকা ছাড়া কলকাতার আর কোথাও একিউআই ২০০-র উপরে যায়নি। গতকাল রাতে সল্টলেক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এলাকায় একিউআই ছিল ১১৬। ২০১৯-এ তা ১২৮ ছিল। গতবছর ওই এলাকার বাতাসে প্রতি ঘন মিটারে পিএম ১০ ছিল সর্বোচ্চ ৫৯৪ মাইক্রোগ্রাম। এ বছর তা কমে ১৭৩.৬০ মাইক্রোগ্রাম হয়েছে।
আরও পড়ুন: শব্দের দাপট ঠেকানো গেল না হাওড়ায়
রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় গতবছর একিউআই ছিল ১৪৭। এ বছর তা কমে ১১৩ হয়েছে। গতবছর সেখানে প্রতি ঘনমিটারে যেখানে ১০১৯.৬৭ মাইক্রোগ্রাম পিএম ১০ ছিল, এ বার তা কমে হয়েছে ১৯৬.৮০ মাইক্রোগ্রাম। বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম সংলগ্ন এলাকায় কালীপুজোর রাতে একিউআই ছিল ১৩১, গত বছর যা ছিল ২০৫। গতকাল ওই এলাকায় বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ১০ ছিল ২৪৮.৬০ মাইক্রোগ্রাম। গত বছর তা ৭৮১.৭০ মাইক্রোগ্রাম ছিল।
গতবারের চেয়ে এ বছর একিউআই নেমে গিয়েছে যাদবপুর এবং ফোর্ট উইলিয়াম সংলগ্ন এলাকাতেও। ২০১৯-এ কালীপুজোর রাতে যাদবপুরে একিউআই ছিল ১৯০, ফোর্ট উইলিয়ামে ১৩৯। এ বছর তা কমে যথাক্রমে ১২৮ এবং ১২৪ হয়েছে। গত বারে যাদবপুরে প্রতি ঘনমিটারে ৮৪৫.৩৭ মাইক্রোগ্রাম পিএম ১০ ছিল। ফোর্ট উইলিয়ামে পিএম ১০ ছিল ৬৪৯.২০ মাইক্রোগ্রাম। এ বছর তা কমে যথাক্রমে ২৪০.২০ এবং ২০৬.২৪ মাইক্রোগ্রাম। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আশপাশে গতকাল বাতাসের একিউআই ছিল ১১৬, গতবারের (৯৮) চেয়ে যা খানিকটা বেশি । এ বারে কালীপুজোর রাতে সেখানে বাতাসে প্রতি ঘন মিটারে ২০৭.৫০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ১০ ছিল, গতবার যা ছিল ৩৬১.০০ মাইক্রোগ্রাম।
তবে শহর কলকাতায় পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, গতকাল রাতে বেলুড়মঠ (৩২৮.৪০), ঘুসুড়ি (৭৫৮.০০)-র এবং শিলিগুড়ি (৩৭৮.৯৬)-র মতো জায়গায় বাতাসে পিএম ১০ সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।