Junior Mridha

কেন খুন হলেন জুনিয়র, এখনও উত্তর খুঁজে চলেছেন মা-বাবা

জুনিয়র মৃধাকে খুনের ঘটনায় সিবিআই প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতারের পাশাপাশি জেরা করেছে বেশ কয়েক জনকে।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৪৪
Share:

জুনিয়র মৃধা

প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া একটা সম্পর্কের জন্য একটা জীবন এ ভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে?

Advertisement

প্রায় এক দশক ধরে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে চলেছেন বেলঘরিয়ার দেশপ্রিয় নগরের মৃধা দম্পতি। গোটাটাই তাঁদের কাছে একটা বিস্ময়! যার নিরসন হয়নি আজও। পুত্রশোকে কাতর বৃদ্ধা শ্বেতা মৃধা শুক্রবার সিবিআই-এর তদন্তকারীদের সামনেও এই প্রশ্ন করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে। কিন্তু কোনও উত্তর পাননি।

জুনিয়র মৃধাকে খুনের ঘটনায় সিবিআই প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতারের পাশাপাশি জেরা করেছে বেশ কয়েক জনকে। কিন্তু জুনিয়রের খুনির খোঁজ মেলেনি এখনও। যার ফলে খুনের ‘উদ্দেশ্য’ নিয়েও ধন্দ কাটছে না তদন্তকারীদের। তবে সিবিআই-এর ধারণা, ত্রিকোণ সম্পর্কের পাশাপাশি প্রভাবশালী তত্ত্বের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই জন্য প্রিয়াঙ্কার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা।

Advertisement

জুনিয়র ও তাঁর পরিবারের কাছে নিজেকে উঠতি মডেল বলে পরিচয় দেওয়া প্রিয়াঙ্কার আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় একটি টিভি শো-র মাধ্যমে। ২০১১ সালের গোড়ার দিকে একটি টিভি শো-এ অংশ নেন প্রিয়াঙ্কা। সেই অনুষ্ঠানে নিজের পরিচয় এবং পরিবারের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, স্বামী এবং ছোট একটি মেয়ে রয়েছে তাঁর।

শ্বেতাদেবী বলেন, “আমার বোন টিভিতে ওই অনুষ্ঠান দেখছিল। সে-ই আমাকে ফোন করে টিভি খুলতে বলে। ও আমাকে বলে, দেখ বাবি (জুনিয়রের ডাকনাম) কার সঙ্গে মেলামেশা করছে। মুন (প্রিয়াঙ্কার ডাক নাম) তো বিবাহিত। আমিও টিভি খুলে দেখি, ওর সিঁথিতে সিঁদুর। ওর শ্বশুরবাড়ির পরিচয় তত ক্ষণে বলা হয়ে গিয়েছে।”

২০০৮ সাল থেকে জুনিয়রের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার সম্পর্ক। তত দিনে জুনিয়রের প্রায় পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। নিজেকে অবিবাহিত বলেই জুনিয়রের পরিবারের সকলকে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্পর্কের তাল কাটে প্রিয়াঙ্কার বিবাহিত পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পরে। জুনিয়রকে সব জানান শ্বেতাদেবী। তিনি বলেন, “ওই ঘটনা শোনার পরে আমার ছেলে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। থম মেরে বসেছিল দীর্ঘক্ষণ। প্রিয়াঙ্কা ফোন করলেও ধরেনি।”

জুনিয়র ফোন ধরছেন না দেখে পরের দিন প্রিয়াঙ্কা নিজেই চলে এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে। জুনিয়র তখন নিজের ঘরেই ছিলেন। প্রিয়াঙ্কা সটান জুনিয়রের ঘরে গিয়ে ঢোকেন। পিছন পিছন গিয়েছিলেন শ্বেতাদেবীও। তিনি বলেন, “মুন ঘরে ঢোকা মাত্রই বাবি ওকে বার করে দেয়। বলে, তুই এখান থেকে বেরিয়ে যা। আর কোনও দিন আসিস না আমাদের বাড়িতে। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করারও চেষ্টা করিস না। আমিই বরং বাবিকে বলি, যা বলার শান্ত ভাবে বল। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিস না।”

এই ঘটনার পরেও প্রিয়াঙ্কা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর চেষ্টা চালিয়ে যান বলে অভিযোগ মৃধা দম্পতির। শ্বেতাদেবীর অভিযোগ, ওই অশান্তির পরেও প্রিয়াঙ্কা মিথ্যা কথা বলেছিলেন তাঁদের। কী বলেছিলেন তিনি? শ্বেতাদেবী বলেন, “মুন বলেছিল, যে বাচ্চাটির কথা সে বলেছে, সেটি তার পিসতুতো দাদার মেয়ে। তার বৌদি সারাক্ষণ বিভিন্ন পার্টিতে যান। মেয়ের খেয়াল রাখেন না। সেই জন্য মেয়েটি ওর কাছেই থাকে। ওকেই মাম্মাম বলে ডাকে।”

আর স্বামী? শ্বেতাদেবী বলেন, “মুন বাবিকে বলে, আমি তো তোকেই আমার স্বামী বলে মনে করি। সেই কথা ভেবেই টিভির অনুষ্ঠানে আমি স্বামীর কথা বলেছিলাম। আমি কি মিথ্যা বলেছি, তুই বল এ বার?”

এত কিছুর পরেও ভেঙে যাওয়া সেই সম্পর্ক আর সেই ভাবে জোড়া লাগেনি। জুনিয়রের মা জানান, প্রিয়াঙ্কা অবশ্য বরাবর যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন জুনিয়রের সঙ্গে। কিন্তু এক সময়ে ফের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। তবে তার কারণ ভিন্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement