সল্টলেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই মিছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। ছবি: সংগৃহীত।
আর জি কর-কাণ্ডের পর থেকে ৩৫ দিন অতিক্রান্ত। বিচারের দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি, আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সরকার পক্ষের সঙ্গে একাধিক বার আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হলেও, শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। এক বার নবান্নে এবং এক বার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবন পর্যন্ত গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে রবিবার রাজপথে মিছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। কলকাতা ও শহরতলিতে দিনভর বৃষ্টি চলেছে। আকাশের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই সেন্ট্রাল পার্ক থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত চলল মিছিল।
আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্যভবনের সামনে রাস্তায় বসে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রবিবার তাঁদের অবস্থানের ষষ্ঠ দিন। সরকার পক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য শুরু থেকেই পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। এই দাবিগুলি নিয়েই রবিবার সল্টলেকের রাস্তায় মিছিল করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মিছিলের ঠিক মুখেই বড় বড় হরফে লেখা, “আর্জি নয়, দাবি কর।” ডাক্তারেরা বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, তাঁরা বিচার চাইছেন না। তাঁরা বিচার দাবি করছেন।
বৃষ্টি মাথায় নিয়েই চলল এগিয়ে চলল মিছিল। বিকেলে মিছিল শুরু হয়ে যখন তা স্বাস্থ্য ভবনের কাছে পৌঁছয়, তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। গোটা মিছিল থেকে ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান উঠল আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে। ভেসে এল শিরদাঁড়া সোজা রাখার আহ্বান। উড়ল তেরঙ্গা। উঠল ‘হোক প্রতিবাদ’ ধ্বনি। রাস্তা জুড়ে জ্বলে উঠল অগুনতি মোবাইলের ফ্ল্যাশের আলো। বিচারের দাবিতে যে তাঁরা এককাট্টা, সেটাই যেন বার বার ফুটে উঠল ফ্ল্যাশের আলোয়। মিছিলে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে মানববন্ধন করতেও দেখা গেল ডাক্তারদের।
আন্দোলনরত ডাক্তারদের মিছিলে রাস্তার দু’পাশ থেকে এগিয়ে এলেন প্রচুর সাধারণ মানুষও। পা মেলালেন তাঁরাও। মিছিলের বহর ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবীণদের কেউ কেউ এগিয়ে এসে আশীর্বাদ করলেন জুনিয়র ডাক্তারদের। যে সাধারণ মানুষেরা ডাক্তারদের মিছিলে পা মেলালেন, তাঁরাও বুঝিয়ে দিলেন ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে তাঁরা একাত্ম। তাঁরা বলছেন, “এ লড়াই আর শুধু ডাক্তারদের লড়াই নয়। এ লড়াই গোটা সমাজের। সাধারণ মানুষের লড়াই।”
মিছিলে হেয়ার স্কুলের প্রাক্তনীরা। রবিবার দুপুরে ধর্মতলায়। ছবি: ভাস্কর মান্না।
মিছিল শেষে চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ জানান, তাঁদের দাবিগুলি পূরণে এখনও সদর্থক কিছুই হয়নি। পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিও আবারও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুললেন জেলা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো নিয়েও। কিঞ্জল বলেন, “বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পরিকাঠামো অত্যন্ত অনুন্নত। কেন একটি প্রান্তিক জেলার মানুষকে বার বার চিকিৎসার জন্য কলকাতামুখী হতে হবে?” প্রতিটি জায়গায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থাকার পরেও কেন এই অবস্থা, সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসক-অভিনেতা।
দুর্গাপুজো এগিয়ে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করেছেন উৎসবে ফেরার জন্য। এই রবিবারের পর, পুজোর আগে বাকি থাকবে আর মাত্র দু’টি রবিবার। যেখানে পুজোর কেনাকাটার ধুম থাকার কথা, সেই জায়গায় রবিবার কলকাতার বুকে দেখা গেল আরজি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবিতে একাধিক মিছিল। কোথাও হাঁটলেন নার্সেরা। কোথাও অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরা। কোথাও আবার বিভিন্ন স্কুলের প্রাক্তনীরা। যাদবপুর থেকে গড়িয়াহাট পর্যন্ত হাঁটলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরা। করুণাময়ী থেকে মিছিল করেন নার্সেরা। ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত একটি মিছিলে হাঁটেন উত্তর ও মধ্য কলকাতার প্রায় ৩০টি স্কুলের প্রাক্তনীরা।
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মূলত পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথম দাবি, নির্যাতিতার বিচার। যদিও ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, এটি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। তাঁরা চান সিবিআই-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলি যাতে দ্রুত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে। দ্বিতীয় দাবি, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার অপসারণ। তৃতীয় দাবি, পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণ এবং ডিসি নর্থ ও ডিসি সাউথের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ। চতুর্থ দাবি, হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। পঞ্চম দাবি, জুনিয়র ডাক্তারদের উপর ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতি দূর করা।