যাদবপুরে গেরুয়া হানা ঠেকাতে বেনজির ছাত্র ঐক্য, চুপ শুধু টিএমসিপি

অগ্নিগর্ভ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিজেপি ও এবিভিপি-র বিশ্ববিদ্যালয় অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র যাদবপুরের বিরাট এলাকা। যাদবপুর থানার মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পৌঁছে গেল গেরুয়া মিছিল। আর সেই মিছিল আটকাতে নজিরবিহীন ছাত্র ঐক্যের সাক্ষী হল বাংলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৩:৫৯
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে গেরুয়া মিছিল। ছবি: বিশ্বনাথ বনিক।

অগ্নিগর্ভ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিজেপি ও এবিভিপি-র বিশ্ববিদ্যালয় অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল যাদবপুরের বিরাট এলাকা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পৌঁছে গেল গেরুয়া মিছিল। আর সেই মিছিল আটকাতে নজিরবিহীন ছাত্র ঐক্যের সাক্ষী হল বাংলা। একাধিক বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি-এবিভিপিকে আটকাতে রাস্তায় নেমে পড়ল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদও। গেরুয়া হানা আটকাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অধ্যাপকরাও অবস্থান শুরু করলেন। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন থাকায় শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি সংঘাতে জড়ায়নি গেরুয়া আর ডান-বাম ছাত্র শিবির। কিন্তু এমন বিশাল ছাত্র আন্দোলনে কোথাও চিহ্ন নেই শাসক দলের সংগঠন টিএমসিপির।

Advertisement

বিজেপি-এবিভিপির মিছিল যাদবপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বনিক।

জেএনইউ কাণ্ডকে ঘিরে কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কানহাইয়া কুমারের গ্রেফতারির প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিছিল করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ। সেই মিছিল থেকে ভারতবিরোধী স্লোগান তোলেন কেউ কেউ। তাতেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে পরিস্থিতি। মিছিলের আয়োজকরা কোনওভাবেই দেশবিরোধী স্লোগানকে সমর্থন করেননি। তার নিন্দাই করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতির সুযোগ নিতে ময়দানে নামে এবিভিপি ও বিজেপি। বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাণ্ডব চালায় এক দল পড়ুয়া। জেএনইউ-কাণ্ডের নিন্দায় যে পোস্টার, ব্যানার লাগানো হয়েছিল, সে সব ভেঙে দেওয়া হয়। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি বিজেপি-এবিভিপি। বৃহস্পতিবার মিছিল নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার কথা ঘোষণা করেন বিজেপি নেতারা।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানে পড়ুয়ারা।

ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

বিজেপি-এবিভিপির সেই মিছিল আটকাতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়। যাদবপুর থানার মোড়েই বিশাল পুলিশ বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ বিজেপির মিছিল সেখানে পৌঁছয়। বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগোতে শুরু করে মিছিল। বিজেপি-এবিভিপি-কে রোখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পাল্টা জমায়েত শুরু হয়েছিল আগেই। পড়ুয়াদের সঙ্গ দিতে ময়দানে নেমেছেন অধ্যাপকদের বিশাল অংশ। অধ্যাপক নন্দিনী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর চেষ্টা করলে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। তাই আমরা বিজেপি-এবিভিপির পথ আটকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের বাইরে গেরুয়া মিছিলের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসা চলছে, তখন বিজেপি-এবিভিপি বিরোধী স্লোগানে মুখর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। এই অবস্থায় আসরে নামে ছাত্র পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে হাজির হয় তারা। বিজেপি--এবিভিপির মিছিলকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কিছুতেই ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে রাস্তাতেই অবস্থান শুরু করেন ছাত্র পরিষদ কর্মীরা। এসএফআই, ডিএসও-র মতো বামপন্থী সংগঠন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, একাধিক নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠন এবং কংগ্রেসের ছাত্র শাখা যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নামল যাদবপুরে গেরুয়া হানা রুখতে, তা বাংলার ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে প্রায় নজিরবিহীন। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও কোথাও খুঁজে পাওয়া য়ায়নি রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-কে। জেএনইউ বা যাদবপুর কাণ্ডে টিএমসিপি কোনও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। রাজ্যের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন বলে নিজেদের দাবি করলেও, এত বড় ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সেই সংগঠনের নেতারা আশ্চর্যজনকভাবে টুঁ শব্দটি করেননি।

বিজেপি এবং তার বিরোধী জমায়েত যাতে মুখোমুখি না হয়, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল এ দিন। পুলিশ ব্যারিকেড ঘিরে রেখেছিল অধ্যাপক-পড়ুয়াদের যৌথ জমায়েতকেও।

গেটে জমায়েত বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

পুলিশের বিশাল বাহিনী থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের কাছে পৌঁছে যায় বিজেপির মিছিল। গেটের ভিতরেই বাধা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল পাল্টা জমায়েত। রাস্তায় অবস্থানে ছিল ছাত্র পরিষদ। মাঝের পুলিশ ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে গেরুয়া মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশের এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যে কোনও মুহূর্তে গোলমাল আরও বড় আকার নেওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে বেলা তিনটে নাগাদ মিছিল ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিজেপি ও এবিভিপি নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement