—প্রতীকী ছবি।
কেউ ৫০ পেরিয়ে গিয়েছেন, কেউ ৪৮, কারও বা ৪৬। নিয়োগের দাবিতে গত দশ বছর ধরে আন্দোলন করতে করতে উচ্চ প্রাথমিকের অনেক চাকরিপ্রার্থীর বয়সই ৪০ বা ৫০ পেরিয়েছে। মেধা তালিকা প্রকাশিত হলেও এখনও আইনি জটে আটকে তাঁদের নিয়োগ-প্রক্রিয়া। স্বভাবতই বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্ন, নিয়োগ-জট যত দিনে কাটবে, তার পরে আর কত দিন তাঁরা চাকরি করতে পারবেন? অনেকের আবার আশঙ্কা, এই জটিলতা কাটতে কাটতে তাঁদের বয়স ৬০ পেরিয়ে যাবে না তো? সে ক্ষেত্রে চাকরি না করেই তো অবসর নিতে হবে তাঁদের।
নদিয়ার বাসিন্দা, ৫৫ বছরের সোমেন হালদার বললেন, ‘‘আমার কাউন্সেলিং শেষ হয়েছে। আমি মুর্শিদাবাদের একটি স্কুল পছন্দের তালিকায় রেখেছি। বাড়ির কাছে স্কুল পাইনি ঠিকই, তবে তাতে হতাশ নই। কারণ, স্কুলে চাকরি করতে আমি এতটাই মরিয়া যে, দূরের স্কুল হলেও আপত্তি নেই। কিন্তু নিয়োগ-প্রক্রিয়াই যে সম্পূর্ণ হচ্ছে না।’’ আপাতত সোমেন মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে (এমএসকে) চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ হলে তিনি স্থায়ী শিক্ষক হবেন। সোমেন বলেন, ‘‘যখন উচ্চ প্রাথমিকের ফর্ম পূরণ করেছিলাম, তখন বয়স ছিল ৪৪। তফসিলি জনজাতিভুক্ত হওয়ায় ওই বয়সেও আবেদন করতে পেরেছিলাম। ভেবেছিলাম, বছর দুয়েকের মধ্যে নিয়োগ হলে অন্তত ১২-১৩ বছর চাকরিটা করতে পারব। কিন্তু এখন যা দেখছি, তাতে অবসরের আগে দু’-তিন বছরও চাকরি করতে পারব কি না, সেটাও অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
ডানলপ এলাকার আর এক চাকরিপ্রার্থী সুকন্যা মিশ্র জানালেন, তাঁর এখন ৪৬। উচ্চ প্রাথমিকে অপেক্ষমাণদের তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম। সুকন্যা বলেন, ‘‘২০১৪ সালে বিজ্ঞপ্তি দেখে যখন আবেদন করেছিলাম, তখন আমার বয়স ছিল ৩৬। সাধারণ ক্যাটিগরিতে ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়। সেই সময়ে আশা করেছিলাম, অন্তত ২০ বছর তো চাকরি করব।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘১০টা বছর যে আমাদের নষ্ট হল, তার দায় কার?’’ এই পরিপ্রেক্ষিতে অবসরের বয়স ৬০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার দাবি জানিয়েছেন সুকন্যা।
আর এক চাকরিপ্রার্থী অয়নকৃষ্ণ শিকদার জানালেন, তাঁর বয়স এখন ৪৮। এখনও স্থায়ী চাকরি হলে তিনি ১২ বছরের মতো চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু সেটা আদৌ হবে কি না, তা নিয়েই তিনি সংশয়ী। অয়ন বলেন, ‘‘এত দেরি হওয়ার জন্য আমাদের চরম আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। চাকরি শেষে নামমাত্র পেনশন পাব। সেই টাকায় কী ভাবে সংসার চলবে?’’ তিনি জানান, ২০১৪ সালে আবেদন করার সময়ে তাঁর মা-বাবা জীবিত ছিলেন। তাঁদের খুব ইচ্ছে ছিল, ছেলে শিক্ষকতার চাকরি করছে, এটা দেখে যাবেন। দু’জনেই বর্তমানে প্রয়াত। অয়ন বলেন, ‘‘পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ঋণ নিয়ে বেসরকারি কলেজ থেকে বি-এড করতে হয়েছে। কোনও কিছুই কাজে লাগল না।’’
নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে আর কত দিন? স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিয়োগের বিষয়ে আমরা খুবই আন্তরিক। সরকারও চায়, যোগ্যদের দ্রুত নিয়োগ হোক। আইনি জট খুলছে। উচ্চ প্রাথমিকের কাউন্সেলিংও অনেকটাই শেষ। দ্রুত নিয়োগ নিয়ে আমরা আশাবাদী।’’