যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছাত্রাবাস। — ফাইল ছবি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছাত্রাবাসের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় মোড় ঘোরানো দাবি হস্টেলের সুপারের। তাঁর দাবি, হস্টেলে র্যাগিং চলত। তা জানতেন কর্তৃপক্ষও। যদিও তা থামাতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হস্টেলে নেশার রমরমা নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। হস্টেলে সিনিয়রদের প্রভাব ছিল বলে দাবি। কিন্তু এত দিন কেন চুপ ছিলেন? উত্তর নেই সুপারের কাছে।
হস্টেলে নতুন ছেলেরা এলে সিনিয়রদের কাছে তাঁদের ‘ইন্ট্রো’ নেওয়া হত। তা জানা আছে সুপারের। কিন্তু ইন্ট্রোর নামে যে ছাত্রমৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে, তা ধারণায় ছিল না তাঁর। এমনই দাবি করেছেন যাদবপুরের প্রধান ছাত্রাবাসের এক হস্টেল সুপার। তিনি দাবি করেছেন, হস্টেলে যে র্যাগিং হত, নেশার আসর বসত— সবই জানেন কর্তৃপক্ষ। যদিও রাতে কোনও গোলমাল হলে কোনও দিনই কর্তৃপক্ষকে পাশে পাননি বলে দাবি করেছেন তিনি। হস্টেল সুপার বলছেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ সবই জানেন। কর্তৃপক্ষ জানেন না এ রকম কিছুই নেই। এটা যাদবপুরে আজ প্রথম হচ্ছে না। বরাবরই যাদবপুরে এটা হয়ে এসেছে। কর্তৃপক্ষ সবই জানতেন, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিতেন না। আমরা কখনও কখনও মৌখিক ভাবে বলেছি, ‘স্যর, এ রকম হচ্ছে।’ কোনও ছেলে যদি কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করতেন তা হলে সব সময় ব্যবস্থা হত, এটা আমি দেখেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও দিন রাতে আসেননি বা কর্তৃপক্ষকে আমরা কোনও দিন পাশে পাইনি রাতে।’’ তাঁর আরও দাবি, হস্টেলে তাঁরা দু’জন মাত্র সুপার আর ৬০০ পড়ুয়া। তাঁরা আর কী করতে পারবেন! হস্টেলে নজরদারি করতে গেলে তাঁদের বাধা দিতেন পড়ুয়ারা বলেও অভিযোগ করেছেন সুপার।
হস্টেল সুপারের দাবি, হস্টেলে শুধু র্যাগিংই নয়, রমরমিয়ে চলত নেশার আসর। তিনি বলছেন, ‘‘ছাত্ররা থাকত। সেখানে মদও খাওয়া হত, গাঁজাও খাওয়া হত। আমি হয়তো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, কেউ হয়তো পুকুরপাড়ে বসে খাচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে চলে যেতাম।’’ কিন্তু হস্টেল সুপারের তো প্রতিবাদ করা উচিত! এই প্রশ্নের জবাবে সুপার বলেন, ‘‘তাঁরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। কিছু বলতে গেলে তাঁরা যদি পাল্টা কিছু বলেন...। তাঁরা যদি গালাগাল দেন, তাই জন্য আর কিছু বলতাম না।’’ কিন্তু হস্টেল চত্বরে পড়ুয়ারা নেশা করছে দেখে কি সুপারের তাতে বাধা দেওয়া উচিত ছিল না? সুপারের কথায়, ‘‘ওখানে পাঁচটি ব্লকের ছেলেরা থাকে। সবাই তো আর আমার ব্লকের না। আমার ব্লকের ছেলেরা হয়তো আমাকে দেখে সরে গেল। অন্য ব্লকের ছেলেদের আমি চট করে কিছু বলতে পারব না। আমি কখনওই বলিনি। ম্যাক্সিমাম তাঁরা ঘরের মধ্যে খান বা ছাদে খান।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র্যাগিং হয়, এটা তিনি জানেন। কিন্তু কোনও দিন র্যাগিং রুখতে পদক্ষেপ করা হয়নি। সুপারের দাবি, নজরদারি করতে হস্টেলের দোতলা বা তিন তলায় গেলে ছাত্ররা তা পছন্দ করতেন না। তাই সুপাররাও হস্টেলের উপরের তলে যেতে আগ্রহ দেখাতেন না। তাঁর আরও অভিযোগ, হস্টেলে বরাবরই প্রাক্তনীদের প্রভাব ছিল। সুপারের দাবি, কর্তৃপক্ষ সবই জানতেন। যদিও প্রশ্ন উঠছে, রোজ অনিয়ম চলছে দেখেও এত দিন কেন চুপ করে বসেছিলেন হস্টেলের সুপার? কেনই বা ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরই তিনি মুখ খুললেন? আরও আগে এ নিয়ে মুখ খুললে কি পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো ঘটনা এড়ানো যেত না? প্রশ্ন অনেক। কিন্তু উত্তর নেই।