এনআরসির বিরোধিতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উমর খালিদ। —নিজস্ব চিত্র।
নতুন ভারতের প্রতিবাদী আন্দোলনের যে কোনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই, সেটাই এর সব থেকে বড় শক্তি বলে মনে করেন তরুণ ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট মুখ উমর খালিদ। সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিলনদার ক্যান্টিনের উল্টো দিকের সিঁড়ির চাতালে বসে তিনি বললেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকার ছায়ার নীচে নয়, দিল্লির শাহিনবাগ বা কলকাতার পার্ক সার্কাসের মতো ঘা-খাওয়া মানুষের মঞ্চ থেকেই নতুন ভারতের নেতৃত্ব উঠে আসবে। তা আপাত বিচ্ছিন্ন, আপাত বিক্ষিপ্ত। সেটাই তার সব থেকে বড় শক্তি।’’
সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রে গড়ে ওঠা ‘উই দ্য পিপল অব ইন্ডিয়া’ নামের একটি মঞ্চের ডাকে এ দিন যাদবপুরের সভায় ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, মোদী সরকারের চক্ষুশূল উমর এবং নবগঠিত স্বরাজ অভিযান দলের নেতা যোগেন্দ্র যাদব ও চলচ্চিত্র-নাট্যকর্মী সুমন মুখোপাধ্যায়।
বিক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে প্রতিবাদ চললেও একসঙ্গে শামিল হওয়ার কয়েকটি দায়ও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এই সভা। যেমন, উমর বললেন, ‘‘১৭ জানুয়ারি হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে খুন হওয়ার তারিখ (রোহিত ওই দিন আত্মহত্যা করেন)। ওই দিনটা পালনের তোড়জোড় চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়া, যাদবপুর— সকলেই তাতে শামিল হতে পারে।’’
আরও পড়ুন: ঘরে-বাইরে নিন্দিত দিলীপ ‘গুলি’তে অটল
নতুন ভারতের নানা সঙ্কেত এ দিন উঠে এসেছে যাদবপুরের সভায়। যোগেন্দ্র বলছিলেন, ‘‘এই ভারতে চিরকেলে ছাঁচ বা ছকগুলো ভেস্তে যাচ্ছে। জামিয়ায় বন্ধু যুবককে বাঁচাচ্ছেন হিজাবধারিণী দুই নারী। শাহিনবাগ, পার্ক সার্কাসের নেতৃত্বে মেয়েরা।’’ বাস্তবিক প্রতিবাদী সভাগুলির বাঁধাধরা পোস্টারেও এখন বলা হচ্ছে, মেয়েদের হাতেই মোদী-অমিতের হিন্দুরাষ্ট্রের বিনাশ। যোগেন্দ্র জোর দিয়ে বলছেন, গাঁধীর পথে জোরালো উচ্চকিত অহিংস শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই শাসকের সামনে সব থেকে বড় প্রতিরোধ হতে পারে। শিল্পী সুমন বললেন, ‘‘শিল্পীর দলহীন হওয়ার সময় এসেছে। নিজের আত্মাকে বিক্রি করলে শিল্পীর বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকবে।’’
একই সঙ্গে আগামীর ভারত নিয়ে কিছু খটকা, কিছু প্রশ্নেরও ছায়া পড়েছে ছাত্র-শিক্ষকদের কথায়। বক্তা ও শ্রোতা— সকলেই একমত, এখনও দেশের একটা বড় অংশ রয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে। তাঁদের সঙ্গেও কথা চালিয়ে যেতে হবে প্রতিবাদীদের। বিবেকানন্দের মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে নিয়ে টানাটানির প্রসঙ্গও উঠেছে। যোগেন্দ্র বলেন, ‘‘গাঁধী, বিবেকানন্দ, অম্বেডকর— সকলেরই কিছু ভাল দিক আছে। কয়েকটি বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে দ্বিমতও হতে পারে। ভালটুকু বা যুগোপযোগী যেটুকু— সকলের কাছ থেকেই তা গ্রহণ করতে হবে।’’ দেশের মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন ভাবে হতাশ করছে। তবু তাদের বাদ দিয়েও কি আন্দোলন চলে? ধন্দ রয়েছে। শুধু সব বিরোধীর জোট গড়ার কথা বললেই মুশকিল আসান হবে, এটা ভাবার কারণ নেই। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মতাদর্শের লড়াইটা জেতাও সমান জরুরি— যাদবপুরের এ দিনের সভা এই মতে স্থিত হয়েছে।