RG Kar Medical College Hospital Incident

তড়িঘড়ি তদন্তে ক্ষতি হবে না তো? দ্রুত কাজ করতে গিয়ে তদন্তে ফাঁক থেকে যাবে না তো? উঠছে প্রশ্ন

পুলিশকে রবিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেওয়ার জন্য পুলিশের হাতে আর ছয় দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২২
Share:

আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদে মিছিল এসএসকেএমে। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশকে রবিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেওয়ার জন্য পুলিশের হাতে আর ছয় দিন। তার মধ্যেই সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করতে হবে, মামলার সাক্ষী জোগাড় করতে হবে। ময়না তদন্তের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ মিলিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। ফরেন্সিক-সহ যে যে রিপোর্ট এই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি আনিয়ে নিয়ে দেখতে হবে, তদন্তে যা উঠে এসেছে, রিপোর্ট তাকে সমর্থন করছে কি না!

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, এমন ঘটনার তদন্ত কি আগামী ছয় দিনের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব? তদন্ত শেষ করা গেলেও অপরাধীর সাজা যাতে নিশ্চিত হয় এমন আঁটসাঁট চার্জশিট কি এত দ্রুত তৈরি করা সম্ভব? এমন তড়িঘড়ি সব করতে গিয়ে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? যেনতেন প্রকারে সমস্তটা মিলিয়ে দিতে গিয়ে তদন্তে ফাঁক থেকে যাবে না তো? প্রশ্ন একাধিক। কিন্তু পুলিশ কর্তাদের কেউই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না। যদিও প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের অনেকেই বলছেন, “তড়িঘড়ি কাজ সারতে গিয়ে পুরোটাই ঘেঁটে যাওয়ার ঝুঁকি প্রবল। এমনও হতে পারে যে, আসল বিষয় দেখাই হল না।”

প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্ত বলেন, “এই ধরনের ঘটনার তদন্ত শেষ করতে যথেষ্ট সময় লাগে। ডিএনএ, ফরেন্সিক পরীক্ষা করতে হবে। তিন বা পাঁচ দিনে এ সব শেষ হবে, তা কখনও বলা যায় না।” মৃতার বাবাও বলেন, “আমরা এখন শুধুই বিচার চাই। তাড়াহুড়ো নয়, ঠিক বিচার।”

Advertisement

এ দিন বাহিনীর অন্দরে এ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই মামলার অন্যতম বিষয় ফরেন্সিক রিপোর্ট। কিন্তু তা আসতেই সময় লেগে যায় ১৫ দিন থেকে এক মাস। মামলার গুরুত্ব বুঝে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার আর্জি জানানো হলেও রবিবারের মধ্যে তা চলে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। খুনি এক জনই কি না, তা জানতে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বীর্যের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্টও ১৫ দিন থেকে এক মাসের আগে আসে না বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এ ক্ষেত্রে আবার ধৃতের ডিএনএ-র সঙ্গে উদ্ধার হওয়া বীর্যের নমুনা মিলিয়ে দেখার কথা। এই রিপোর্ট পেতে দেরি হয় আরও। এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, “বীর্যের নমুনা পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা শক্ত। ধৃতের সঙ্গে ওই বীর্যের নমুনা মেলার উপরে অনেক কিছু দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এত কিছু করে চার্জশিট লেখা হবে কখন?”

মুখ্যমন্ত্রীর এমন নির্দেশ নতুন নয়। ২০২২ সালের ৬ জুন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছেই হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটে অশোক শাহ এবং তাঁর স্ত্রী রশ্মিতা খুন হন। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কমিশনারকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দেন, “৯৯ শতাংশ তদন্ত হয়েছে। দ্রুত অভিযুক্তেরা ধরা পড়বে।” কিন্তু এর পরে বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হলেও ঘটনার মূল অভিযুক্ত সোমবার রাত পর্যন্ত অধরা। পুলিশেরই কেউ কেউ বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দেওয়ায় তড়িঘড়ি তদন্ত গোটানোর চেষ্টা হয়। যে দিকে নজর রাখার কথা ছিল, সে দিকে নজর না দেওয়ায় মূল চক্রী রাজ্যের বাইরে পালিয়ে যায়।”

কামদুনি-কাণ্ডেও চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ, ‘চাপে পড়ে’ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট দিতে বেগ পেতে হয়েছিল সিআইডি-কে। চার্জশিট জমা দেওয়ার পরেও তাতে প্রচুর ভুলভ্রান্তি ধরা পড়ে। যা সামলাতে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিতে হয়। পুলিশের একটি অংশের দাবি, তাড়াহুড়ো করে তদন্ত করে দুর্বল চার্জশিট জমা দেওয়ায় নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত কেউ হাই কোর্টে বেকসুর, কারও সাজা কমেছে। কামদুনির নির্যাতিতার ভাই বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সে দিন খুশি হয়েছিলাম। পরে ফল ভুগেছি। আমরা যে ভুল করেছি, আরজি করের নির্যাতিতার পরিবার যেন সেই দ্রুত তদন্ত শেষের ফাঁদে পা না দেয়।”

এর মধ্যে এ দিন লালবাজারে গিয়ে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল। দলটি মৃতার বাড়িতেও যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement