সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বেলা গড়াতে মেঘ কেটে মাঝেমধ্যে উঁকি মারছিল সূর্য। সেই ফাঁকেই শহরের উৎসাহী জনগণ প্রত্যক্ষ করতে পেরেছেন সূর্যের আংশিক বলয়গ্রাস।
রবিবার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে এই বলয়গ্রাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন আকাশের মুখ ভার। শহরের কিছু জায়গায় নেমেছিল বৃষ্টিও। ফলে টেলিস্কোপ নিয়ে তৈরি থাকলেও বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়াম (বিআইটিএম) তখনকার মতো অনলাইনে সূর্যের আংশিক বলয়গ্রাস দেখাতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ওই সংস্থা এ বছর অনলাইনে সরাসরি এই মহাজাগতিক মুহূর্ত দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল। মেঘ কেটে গেলে অবশ্য তাদের টেলিস্কোপে ধরা পড়ে সূর্যের আংশিক বলয়গ্রাস।
খালি চোখে, চশমা পরে বা এক্স-রে ও ফিল্ম পেপারের মাধ্যমে সূর্যগ্রহণ সরাসরি দেখতে নিষেধ করেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অনায়াসেই সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে দেখা গেল উত্তর থেকে দক্ষিণে। বেলা এগারোটা নাগাদ বাবুঘাটে যখন বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন তুলনায় পরিষ্কার কাঁকুড়গাছির আকাশের দিকে এক্স-রে প্লেট ধরে মেঘের আড়াল থেকে উঁকি মারা সূর্যের বলয়গ্রাস দেখছিলেন অনেকেই। মেঘ সরতেই শহরের বিভিন্ন এলাকার ছাদ থেকে এক্স-রে প্লেট, রঙিন চশমা পরে বলয়গ্রাসের সাক্ষী হতে দেখা গিয়েছে অত্যুৎসাহীদের।
আরও পড়ুন: ৫০ কোটি টাকা পাচারের ভুয়ো খবর ট্র্যাফিককে
সূর্যের বলয়গ্রাস এ শহর থেকে প্রায় ৬৬ শতাংশ প্রত্যক্ষ করা যাবে, জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। বিআইটিএম-এর বিশেষজ্ঞেরা জানান, বলয়গ্রাসের সেরা সময় (পিক টাইম) ছিল দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিট। ওই সময়ে কিছু এলাকায় মেঘ কেটে যায়। তখন কলকাতার আকাশে দেখা যায় কাস্তের আকারের সূর্য। বিআইটিএম-এর টেকনিক্যাল অফিসার গৌতম শীল বলেন, ‘‘পিক টাইমে প্রায় ১৫ মিনিটের মতো আকাশ পরিষ্কার থাকায় টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে সূর্যের বলয়গ্রাস।’’
যে কোনও মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে টেলিস্কোপ নিয়ে তালতলা পাবলিক লাইব্রেরির ছাদে হাজির হয়ে যায় মহাকাশ পর্যবেক্ষণে উৎসাহী স্থানীয় একটি ক্লাব। ওই ক্লাবের তরফে চিকিৎসক শঙ্কর নাথ জানান, এ বার লাইব্রেরির ছাদে নয়, নিজেদের বাড়ির ছাদেই হাজির হয়েছিলেন টেলিস্কোপ নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘মেঘ সরার আশায় ধৈর্য ধরে সকলে অপেক্ষা করেছি। ১২টা ৩৭-এর পরেই মেঘ কেটে যাওয়ায় কিছু ক্ষণের জন্য হলেও বলয়গ্রাস দেখা গিয়েছে।’’
এ দিন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ-সহ বিভিন্ন সংগঠনের তরফে উৎসাহী মানুষদের গ্রহণ দেখানোর আয়োজন করা হয়েছিল। বাইপাসে মুকুন্দপুরের কাছে ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর নবনির্মিত বাড়ি থেকেও গ্রহণ দেখা হয়েছে।
সূর্যগ্রহণের পরে গঙ্গায় স্নান করার পুরনো রীতি কিছু মানুষের মধ্যে এখনও যে আছে, তার প্রমাণ মিলল বাজেকদমতলা ঘাটে। যাদবপুরের বাসিন্দা বিভা ঘোষ এ দিন বৃষ্টি উপেক্ষা স্নান করতে সপরিবার সেখানে হাজির হয়েছিলেন।