প্রতীকী ছবি।
মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করতেন তিনি। সেই মেঘনাদের মতোই এ বার কম্পিউটার স্ক্রিনের আড়াল থেকে অনলাইন পরীক্ষার গার্ড দেবেন শিক্ষকেরা। পরীক্ষার্থী বুঝতেও পারবে না, কে গার্ড দিচ্ছেন।
নতুন শিক্ষাবর্ষে এতটাই আঁটঘাট বেঁধে নামছে স্কুলগুলি। গত বছর অনলাইন পরীক্ষার সময়ে বই দেখে উত্তর লেখার অভিযোগ উঠেছিল। এ বার তাই অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষায় বেশ কিছু পরিমার্জন করছে শহরের অধিকাংশ স্কুল।
কোথাও আবার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, পরীক্ষার সময়ে ক্যামেরা এমন ভাবে রাখতে হবে, যাতে পরীক্ষার্থী যেখানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেই জায়গার পুরো ছবি দেখা যায়। পরীক্ষার পরে উত্তরপত্র ইমেল করা পর্যন্ত বন্ধ করা যাবে না ক্যামেরা।
গত বছর মার্চ থেকে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলগুলি। পরে পঠনপাঠন শুরু হয় অনলাইনে। শিক্ষকদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, গত বছর অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তুতির সময় তাঁরা বিশেষ পাননি। চলতি বছর মার্চ থেকে ফের করোনা বাড়তে থাকায় নতুন শিক্ষাবর্ষেও অনেক স্কুল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চালু রাখছে অনলাইন ক্লাস।
শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্যের মতে, অনলাইন পরীক্ষায় বই দেখে লেখার সুযোগ থাকে, এ রকম অভিযোগ উঠেছে। ব্রততীদেবী বলেন, ‘‘এ বার পরীক্ষা চলাকালীন কেউ দেখে লিখছে কি না, তা আমরা ধরতে আরও কড়া ব্যবস্থা রাখছি। ক্যামেরা চালু রেখে পরীক্ষা তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে পরীক্ষায় এক জন গার্ডও দিচ্ছেন। কিন্তু কে গার্ড দিচ্ছেন, কোথা থেকে গার্ড দেওয়া হচ্ছে, তা দেখতে পাবে না পরীক্ষার্থী।” দোলনা ডে স্কুলের এক অভিভাবক জানান, অনলাইনে পরীক্ষার সময়ে ক্যামেরা এমন জায়গায় রাখতে হচ্ছে, যাতে মেয়ে যেখানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেই পুরো জায়গাটা দেখা যায়। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র ইমেল করার পরে ক্যামেরা বন্ধ করতে হচ্ছে।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি জানান, তাঁরা অনলাইন পরীক্ষায় মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন। অনলাইনে শুধু লিখিত পরীক্ষাই নয়, বিজ্ঞান-সহ নানা বিষয়ের প্রজেক্টও দেওয়া হচ্ছে। এই বছর সেই প্রজেক্টের সংখ্যা আরও বাড়বে। লিখিত পরীক্ষার সময়সীমা এমন ভাবে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে যে পরীক্ষার্থী দেখে লিখতে চাইলে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব উত্তর দিয়ে উঠতে পারবে না।
এ দিকে মোবাইলে বা ল্যাপটপে টানা অনলাইন ক্লাস করলে সন্তানদের চোখের উপরে চাপ পড়ছে বলে কিছু অভিভাবক অভিযোগ করছেন। ডিপিএস রুবি পার্কের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক জানান, তাঁদের ছেলের স্কুলে অনলাইন ক্লাস গত বছর ভালই হয়েছিল। কিন্তু কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে টানা অনলাইন ক্লাস করে যাওয়ায় চোখে ব্যথা শুরু হয় ছেলের। সাধারণ ক্লাস যেমন পর পর হয়, সে ভাবে অনলাইন ক্লাস না হলেই ভাল হয় বলে তাঁর মত। দু’টি অনলাইন ক্লাসের মধ্যে বিরতি দেওয়ার জন্য স্কুলকে আবেদন করবেন তিনি।
টাকি হাউস স্কুল ফর বয়েজ-এর প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক অবশ্য জানান, পড়ুয়াদের চোখের বিশ্রামের কথা ভেবেই তাঁরা দিনে চারটে বা পাঁচটার বেশি ক্লাস রাখছেন না। তিনিও বলেন, ‘‘অনলাইন পরীক্ষায় প্রশ্ন এমন করা হবে, যাতে পরীক্ষার্থী সরাসরি বই দেখে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পায়। বিষয়টি বুঝলে তবেই সেই উত্তর লিখতে পারবে।’’