দুর্নীতি করেছে, গুন্ডামি ছাড়া জিতবে না: রূপা

পাঁচ বছরে পুরসভার বিরোধী মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি। অবস্থান যে বদলাবে, তেমন সম্ভাবনাও দূর-অস্ত্। তবু তৃণমূল পুরবোর্ডের ‘দুর্নীতি’কে হাতিয়ার করে এ বার তাঁরা জিতবেনই দাবি করলেন বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের রূপা বাগচী। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন অনুপ চট্টোপাধ্যায়।পাঁচ বছরে পুরসভার বিরোধী মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি। অবস্থান যে বদলাবে, তেমন সম্ভাবনাও দূর-অস্ত্। তবু তৃণমূল পুরবোর্ডের ‘দুর্নীতি’কে হাতিয়ার করে এ বার তাঁরা জিতবেনই দাবি করলেন বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের রূপা বাগচী। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন অনুপ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০০:৪৬
Share:

মনোনয়নপত্র জমা দিলেন রূপা বাগচী। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্ন: আপনারা পাঁচ বছর পুর-ক্ষমতায় নেই। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন ভোটের ফলাফলের নিরিখেও বামেরা অতি দুর্বল। এর পরেও পুরভোটে জয়ের আশা করছেন কী ভাবে?

Advertisement

রূপা বাগচী: করছি। কারণ, তৃণমূল বোর্ডের দুর্নীতি দেখে বীতশ্রদ্ধ শহরবাসী। ত্রিফলা কেলেঙ্কারি থেকে লেক মল চুক্তি ভাঙা, সবই তৃণমূল বোর্ডের দুর্নীতির চরম নিদর্শন। মানুষ তার জবাব দেবেনই। তৃণমূল-বিরোধী ভোটই বামেদের ঝুলিতে আসবে।

Advertisement

প্রশ্ন: মেয়র তো বলছেন বিজেপি এবং আপনাদের লড়াই দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান নিয়ে। তৃণমূলের ধারেকাছেও যেতে পারবে না বামেরা।

রূপা বাগচী: মেয়রের ওই দাবির মূল কারণ ওঁদের পেশিবল। ওঁরা গত কয়েকটি নির্বাচন গুন্ডামি করে জিতেছেন। পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছেন। তাই এক নম্বরে থাকার কথা বলছেন। আমরাও তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার কথা বলছি। অবাধে ভোট দিতে পারলে অন্য ফল দেখবেন শহরের মানুষ।

প্রশ্ন: লোকসভা ভোটের ফলের ভিত্তিতে গত বারের চেয়েও গোটা দশেক পুর-আসনে পিছিয়ে আপনারা। ৩৩ থেকে ২৩ হয়ে গিয়েছে। সামাল দেবেন কী ভাবে?

রূপা বাগচী: লোকসভা আর পুরসভার ভোট এক ব্যাপার নয়। তা ছাড়া, ওই ভোটে কংগ্রেসকে সরাতে নরেন্দ্র মোদী ফ্যাক্টর কাজ করেছিল। এখন বিজেপি-ও তলানিতে। তৃণমূলের সঙ্গে ময়দানে আমরাই। অবশ্য ভোট টানতে বিল্ডিং রুল থেকে সম্পত্তি কর সবেই ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছে তৃণমূল বোর্ড। তবু আমার বিশ্বাস, দুর্নীতির কারণে মানুষ ওঁদের বিরুদ্ধেই রায় দেবেন।

প্রশ্ন: মেয়র তো বলেছেন ত্রিফলা কেলেঙ্কারি নিয়ে তাঁরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। অডিট করিয়েছেন।

রূপা বাগচী: আসলে পুরসভার একাধিক অফিসারকে সরিয়ে ওঁরা স্বচ্ছ থাকার ভান করেছেন। ৩০ কোটির এই কেলেঙ্কারির দায় কি এক জনের? মেয়র ও তাঁর এক পারিষদেরও তো স্বাক্ষর ছিল। তাঁরাই বা ছাড় পাবেন কোন যুক্তিতে?

প্রশ্ন: মেয়রের দাবি, লেক মলের চুক্তি ভাঙা নিয়ে বেআইনি কিছু হয়নি।

রূপা বাগচী: তা হলে রাজ্যের অর্থসচিব ওই চুক্তির ফাইল ফিরিয়ে দিয়েছেন কেন? কেনই বা লেক মলের প্রথম চুক্তি রেজিস্ট্রেশন করা হলেও দ্বিতীয়টি আটকে রাখা হয়েছে? সরকার-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর আর্থিক বোঝা কমাতে ২৪ কোটি টাকা লোকসান করে ৬০ বছরের ওই চুক্তিকে দু’ভাগে ভেঙেছে পুরবোর্ড। মেয়র যতই আড়াল করুন, মানুষ সত্যিটা জানেন। এর সঙ্গে মিউটেশন-কাণ্ড, চাল চুরি, তেল চুরির দুর্নীতিও রয়েছে। ভোট টানতেই বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বেআইনি বিল্ডিংকে বৈধতা দেওয়ার আইনও করেছে তৃণমূল। যাতে লাভবান হবেন প্রোমোটারেরা।

প্রশ্ন: মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ২০ বছরে বাম বোর্ড যা করতে পারেনি, তৃণমূল মাত্র ৫ বছরে তার থেকে বেশি কাজ করেছে। বস্তি-উন্নয়নে গরিব মানুষের জন্য জল-আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। যা বাম আমলে কেউ ভাবেনওনি।

রূপা বাগচী: মিথ্যে কথা। বরং ২০১০-এ ওঁরা ইস্তেহারে লিখেছিলেন, ক্ষমতায় এলে কলকাতার প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে মডেল বস্তি করবেন। পাঁচ বছরে শহরের ১৪১টি ওয়ার্ডে মডেল বস্তি মাত্র একটি। তা-ও এখনও অসম্পূর্ণ। কিছু বস্তির ভিতরে শৌচাগার খোলা অবস্থায় থাকায় কাপড় টাঙিয়ে আব্রু বাঁচাতে হয় মহিলাদের।

প্রশ্ন: ২০০৫-১০ আপনারা তো পুরবোর্ডের ক্ষমতায় ছিলেন। বস্তি উন্নয়নে কী করেছিলেন?

রূপা বাগচী: তখন বিএসইউপি প্রকল্পে ৮৯৮০টি ঘর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। আমরা বরো ভিত্তিক টাকা দিয়ে বস্তির সমস্যা দ্রুত সারাতাম। কিন্তু তৃণমূল বরো ভিত্তিক অনুদান বন্ধ করে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করায় বস্তির ছোটখাটো সমস্যার দ্রুত সমাধান আটকে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: গত পুর-ভোটের আগে শহর জুড়ে হোর্ডিংয়ে স্লোগান দেখা যেত, ‘ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার সরকার, আর নেই দরকার’। বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যয়ের দাবি, পুরবোর্ড তাঁদের দখলে আসার পরে ওই দুই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।

রূপা বাগচী: কিছু ক্ষেত্রে উদ্যোগ দেখা গেলেও সামগ্রিক কাজ হয়নি। ওঁরা তো নিজেদের ইস্তেহারে জানিয়েছিল ৫ বছরে ম্যালেরিয়া মুক্ত হবে শহর। তা তো হয়ইনি। বরং ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি জাপানি এনসেফেলাইটিস এবং সোয়াইন ফ্লু নিয়ে শহরবাসীকে সজাগ করার কাজেও চরম খামতি দেখা গিয়েছে।

প্রশ্ন: মেয়র বলেছেন শহরের ১৪১টি ওয়ার্ডেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করেছেন তাঁরা।

রূপা বাগচী: আমরা ১৩৬টি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র করে গিয়েছিলাম। ওঁরা আর ৫টি করেছেন। এটা সাফল্য হলে তৃণমূল সফল।

প্রশ্ন: মেয়র বলেছেন শহরের ৯৫ ভাগ মানুষের কাছে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছেন।

রূপা বাগচী: তা হলে পুর প্রশাসনকে এখনও ৪৩০টি গভীর নলকূপ চালাতে হচ্ছে কেন? ১২ হাজারেরও বেশি টিউবওয়েল কাজ করছে পুর-এলাকায়। সঙ্গে চলছে ৮ হাজারেরও বেশি বেসরকারি গভীর নলকূপ।

প্রশ্ন: দল জিতলে মেয়রের চেয়ারে কী আপনি বসবেন?

রূপা বাগচী: আমাদের দলটা তৃণমূল নয়। একটা শৃঙ্খলা রয়েছে। কোনও একজন বললেই সব হয় না। শরিক দল রয়েছে। যা সিদ্ধান্ত, বামফ্রন্টে আলোচনা করেই হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement