মনোরোগীদের নিয়ে পুজো দেখা বারাসতে

কেউ সাত, কেউ চার বছর টানা রয়েছেন হাসপাতালে। এক দিনের জন্যও বাইরে বেরোননি। এত দিন পরে শুক্রবার প্রথম বেরোলেন তাঁরা। আলো দেখলেন। মহাষষ্ঠী পুজোর আলোও। এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে কেউ দেবীকে প্রণাম করে কাঁদছেন।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৭
Share:

কেউ সাত, কেউ চার বছর টানা রয়েছেন হাসপাতালে। এক দিনের জন্যও বাইরে বেরোননি। এত দিন পরে শুক্রবার প্রথম বেরোলেন তাঁরা। আলো দেখলেন। মহাষষ্ঠী পুজোর আলোও। এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে কেউ দেবীকে প্রণাম করে কাঁদছেন। কেউ হাসতে হাসতে বায়না ধরেছেন, একটু ঢাক বাজাবেন বলে।

Advertisement

এঁরা সকলেই মনোরোগী। কেউ কেউ অবশ্য অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু বাড়ির লোক ফিরিয়ে নিতে চাননি। ফলে এখন তাঁদের ‘স্থায়ী’ ঠিকানা উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের জেলা হাসপাতাল। এমন সাত জনকে নিয়ে ষষ্ঠীর দিন বারাসতের বিভিন্ন মণ্ডপের ঠাকুর দেখানো হল হাসপাতালেরই তরফে।

পঞ্চমীর দিনই দিয়ে দেওয়া হয়েছিল নতুন শাড়ি, জামাকাপড়। ষষ্ঠীর দিন ভোরটা ছিল একেবারেই অন্য রকম। হাসপাতালেরই এক নার্সের কথায়, ‘‘ভোর থাকতেই ঘুম থেকে উঠে সাজগোজের জন্য সে কী ব্যস্ততা!’’ তাড়াতাড়ি স্নান সেরে, নতুন জামা পরে প্রাতরাশ সেরেই তৈরি বছর তিরিশের ব্যাতিকা মণ্ডল। বছর চারেক ধরে রয়েছেন হাসপাতালে। তাঁকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না বাড়ির কেউই।

Advertisement

সকাল সকাল চলে এসেছিল গাড়ি। গাড়ি বলতে, হাসপাতালেরই অ্যাম্বুল্যান্স। সেখানে ততক্ষণে উঠে পড়েছেন হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল-সহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, কাউন্সিলর, নার্স ও নিরাপত্তা রক্ষীরাও। নার্সেরাই সঙ্গে করে তুললেন ব্যাতিকাদের। আগেভাগেই জানানো ছিল বারাসতের বড় পুজোর উদ্যাক্তাদের। অতিথি আপ্যায়নে প্রস্তুত ছিল পুজো কমিটিগুলিও। ১৬ বছরের সুমি সোরেনের মতো অতিথিরা নামতেই আদর করে ঢোকানো হল মণ্ডপে। দেওয়া হল পুজোর ভোগ। মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘির বাসিন্দা সুমি কত বছর ধরে হাসপাতালে রয়েছে, তা সে নিজেও বলতে পারে না। প্রতিমার সামনে কেউ যখন করজোরে কাঁদছেন তখন সুমির বায়না, ‘‘আমি আইসক্রিম খাব।’’ দেওয়াও হল। সকলকেই।

এত পুজো দেখেও যেন ক্লান্তি নেই। হাসপাতালে ফিরে বিশেষ ভোজ। বাসমতি চালের ভাত, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, মাছ, মাংস, মিষ্টি। সুমিদের পুজো দেখিয়ে, হাসপাতালের রোগী দেখে তখন সবে নিজের চেয়ারে বসেছেন সুপার। হঠাৎ ঘরে পরপর সকলে ঢুকে ঢিপঢিপ করে প্রণাম। এ বার বায়না, ‘‘বারাসতের কালীপুজো তো বিখ্যাত। সেটাও দেখাতে হবে স্যার।’’ সুপার সম্মতি দিতেই নিজেদের বেডে ফিরে গেল হাসমুখগুলি। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘আগে কোনও পুজোয় এত তৃপ্তি পাইনি।’’ সহমত হাসাপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক-নার্সেরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement