ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পড়শি রাজ্যগুলিতে মাওবাদী কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় এক সময়ে রেলযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পূর্ব রেলের চারটি শাখায় তৈরি করা হয়েছিল বম্ব স্কোয়াড।
অভিযোগ, রেল বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই ২০২০ সালে সেই বম্ব স্কোয়াড ভেঙে দেয় পূর্ব রেল। বদলি করে দেওয়া হয় ওই চার শাখায় কর্মরত ৬৫ জন প্রশিক্ষিত কর্মীকে। দীর্ঘ দিন ব্যবহার না করার ফলে নষ্ট হয়ে যায় ২০ কোটি টাকার বোমা চিহ্নিতকরণ ও নিষ্ক্রিয় করার মূল্যবান যন্ত্রপাতি। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী রাজ্য-সহ এই রাজ্যে ফের মাওবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলের নিরাপত্তার
প্রশ্নে চিঠি দিয়ে সমস্ত বদলির নির্দেশ বাতিল করার কথা বলেছে রেল বোর্ড। সেই সঙ্গে ফের বম্ব স্কোয়াড গঠন করার নির্দেশও দিয়েছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসেছেন পূর্ব রেলের কর্তারা।
পূর্ব রেলের আরপিএফের প্রিন্সিপাল চিফ সিকিয়োরিটি কমিশনার পরম শিব বলেন, ‘‘রেল বোর্ডের নির্দেশ পেয়ে ফের বম্ব স্কোয়াড গঠন করার প্রস্তুতি চলছে। আগের সমস্ত যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে ওই সব যন্ত্র ফের কেনা হবে।’’
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, ২০০৬ সালের পরে পূর্ব রেলের কয়েকটি শাখায় মাওবাদীদের নাশকতামূলক কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় হাওড়া, শিয়ালদহ, আসানসোল ও মালদহ ডিভিশনে বম্ব স্কোয়াড তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল রেল বোর্ড। তার পরেই বিস্ফোরক চিহ্নিতকরণ ও নিষ্ক্রিয় করার জন্য ২০০৯ সাল থেকে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক যন্ত্র কেনা শুরু হয়। চারটি ডিভিশনে বম্ব স্কোয়াড তৈরির জন্য কেনা হয় বম্ব শার্ট, ডিপ সার্চ মেটাল ডিটেক্টর, ইলেক্ট্রনিক স্টেথোস্কোপ, লিনিয়ার জংশন ডিটেক্টর, এক্সক্লুসিভ ভেপার ডিটেক্টর, বম্ব বাস্কেট-সহ প্রায় ২০ কোটি টাকার যন্ত্র।
হাওড়ায় পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, শুধু চারটি শাখার স্কোয়াডের জন্য চারটি বম্ব শার্ট কিনতেই সে সময়ে খরচ হয়েছিল ৪৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া ৫০টি ডিপ সার্চ মেটাল ডিটেক্টরের প্রতিটির দাম পড়েছিল ৮ লক্ষ টাকা। ৪টি এক্সক্লুসিভ ভেপার ডিটেক্টরের মোট দাম ছিল ৬৪ লক্ষ টাকা। ৮টি ইলেক্ট্রনিক স্টেথোস্কোপের প্রতিটির দাম ছিল ৩ লক্ষ। ওই কর্তা বলেন, ‘‘এ ছাড়া আরও অন্যান্য যন্ত্র-সহ প্রায় ২০ কোটি টাকার জিনিস কেনা হয়। এর পরে ২০১৭ সালে চারটি ডিভিশনে ৬৫ জনের বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াড গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৬৪ জনকে খড়্গপুর ইএফআর বম্ব স্কোয়াড ইউনিটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এক জনের প্রশিক্ষণ হয় হরিয়ানায় এনএসজি-তে। কিন্তু প্রায় কোনও যন্ত্র ব্যবহার না করে আচমকা ২০২০ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় চারটি স্কোয়াডই। বদলি করে দেওয়া হয় ওই ৬৫ জন কর্মীকে।’’
এর মধ্যে গোয়েন্দা সূত্রে বিভিন্ন রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধির খবর আসার পরে টনক নড়ে রেল বোর্ডের কর্তাদের। রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সারিকা মোহন গত ১৯ এপ্রিল আরপিএফের প্রিন্সিপাল চিফ সিকিয়োরিটি কমিশনারকে চিঠি দিয়ে আগের সমস্ত বদলির নির্দেশ বাতিল করতে বলেন। পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরেই নতুন করে বম্ব স্কোয়াড গঠন ও যন্ত্রপাতি কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
কিন্তু ২০২০ সালে আচমকা কেন বন্ধ করা হয়েছিল ওই স্কোয়াড? আরপিএফের চিফ সিকিয়োরিটি কমিশনার বলেন, ‘‘২০০৮-২০০৯ থেকে যন্ত্রগুলি কেনা হয়েছিল। তাই সেগুলির আয়ু শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই সমস্ত বৈদ্যুতিন যন্ত্রের আয়ু বেশি দিন হয় না। সেই কারণেই সম্ভবত স্কোয়াডের কর্মীদের বদলি করে দেওয়া হয়।’’
কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করে এত বছর আগে কেন কেনা হয়েছিল যন্ত্রগুলি? বম্ব স্কোয়াড তৈরি করতেই বা ২০১৭ সাল হয়ে গেল কেন?
এই সব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য রেলের কর্তারা কেউ দিতে পারেননি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’