দেশের অর্থমন্ত্রী নিদান দিয়েছেন সিগারেট বা তামাকজাত পণ্যে ১৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের। প্রতীকী ছবি।
ধর্মতলার পুরনো পানশালা। পুরু কাচের দরজা ঠেলে ঢুকে কোণের দিকে ধপ করে চেয়ারে বসলেন ভদ্রলোক। অকাল বসন্তে কপালে বিনবিনে ঘাম। পরিচিত বার-বয় হেসে এগিয়ে আসতেই ভদ্রলোক কান্না-করুণ গলায় বললেন, ‘‘একটা ভেঙে দুটো করে দাও ভাই!’’
বুঝতে না পেরে যুবক বললেন, ‘‘যেমন দিই, দু’পেগই দেব তো স্যর!’’ উত্তর আসে, ‘‘না ভাই, সন্ধের এই এক ফালি আনন্দটুকুও নির্মলা ছারখার করে দিলেন! এক পেগই দাও, দুটো গ্লাসে অর্ধেক করে। অন্তত মনে হবে, দুটো খাচ্ছি। সিগারেটের খরচের ভারসাম্য রাখতে এ ছাড়া উপায় কী!’’
বুধ-সন্ধ্যার এই ব্যয়সঙ্কোচের উৎস সাতসকালের বাজেট বক্তৃতা। যেখানে দেশের অর্থমন্ত্রী নিদান দিয়েছেন সিগারেট বা তামাকজাত পণ্যে ১৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের। তাই ব্যয়সঙ্কোচ ছাড়া গত্যন্তর দেখছেন না অধিকাংশই।
মদ্যপায়ীদের পাশাপাশি চা-পিপাসুদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা যে একই সুতোয় বাঁধা, মহাকরণ লাগোয়া চায়ের দোকানে কান পাতলেও তা মালুম হচ্ছে। দোকানি বলছেন, ‘‘আরে মশাই, এক দুপুরেই তো দেখছি, চায়ের বিক্রি অর্ধেক হয়ে গেল! কলেজ ক্যান্টিনের মতো সকলে হাঁক দিচ্ছেন, ‘ওরে তিনটেকে পাঁচটা করে দিস!’ আর সিগারেটও দেখছি পাঁচ জনে মিলে তিনটে খাচ্ছেন।’’ করোনার কোপে এঁটো না-খাওয়ার দিন ভুলে সিগারেটে ‘কাউন্টার’ খাওয়ার চল ফিরে এসেছে অফিসপাড়ার আনাচকানাচে।
সল্টলেকের ঝকঝকে কর্পোরেট অফিস। সুরেলা রিসেপশন, কাচে ঘেরা ক্যান্টিন, অফিসের ক্লান্তি কাটাতে জিম। কর্মীরা একতলায় নেমে লম্বা সিগারেট খান, ক্লান্তি দূর করতে। আশপাশের সিগারেটের দোকানে খোঁজ নিতেই শোনা গেল, ‘‘আর বলবেন না, আড়াই প্যাকেটের বাঁধা খদ্দের গুনে গুনে পাঁচটা সিগারেট খেয়ে বললেন, ‘আরও কমাতে হবে রে’!’’
কলেজবেলা বুঝি ফিরেছে কর্পোরেটেও! অফিসের নীচে পাঁচ মাথা এক হলে সাড়ে বাইশ টাকার কিং সাইজ় অন্যকে এগিয়ে দেওয়ার বদলে এ দিন চোখে পড়েছে, সিগারেট ধরিয়ে গাছের আড়ালে হারিয়ে যেতে। এক কর্পোরেট-কর্তা বলছেন, ‘‘কী করব বলুন! তার চেয়ে একটা সিগারেটেই তিন জনে ঠোঁট লাগিয়ে খাই। খরচও বাঁচল, কলেজ-স্মৃতিও ফিরল!’’