Fraudulent

নম্বর বন্ধ হবে! ফাঁদে পা দিলেই উধাও হচ্ছে টাকা

এই প্রতারণা-চক্রের সঙ্গে রাস্তার ধারের সিম কার্ড বিক্রির দোকানগুলির একটা সমঝোতা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৬:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘটনা ১: বেলেঘাটার তপনকুমার দত্ত নিজের মোবাইলে একটি মেসেজ পান দিন কয়েক আগে। তাতে লেখা ছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ওই নম্বরটি বন্ধ হয়ে যাবে। সেটি চালু রাখতে গেলে মেসেজে দেওয়া নম্বরে ফোন করে দ্রুত ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ‘কেওয়াইসি আপডেট’ করাতে হবে। নম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে দ্রুত ওই নম্বরে ফোনও করে বসেন তপনবাবু। প্রথমে তাঁর মোবাইলে একটি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে বলা হয় ‘প্লে স্টোর’ থেকে। তিনি তা করতেই ফোনের সঙ্গে যুক্ত তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দু’দফায় হাওয়া হয়ে যায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা!

Advertisement

ঘটনা ২: ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার সংলগ্ন একটি বাড়ি পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। প্রায় দু’কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণার একটি মামলায় মূল চক্রী হিসেবে ওই বাড়িরই এক বাসিন্দাকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছে পুলিশ। যে ফোন নম্বর থেকে টাকা হাতানোর কারসাজি করা হয়েছে, সেটি নাকি ওই ব্যক্তির নামেই নেওয়া। নম্বরটি যে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার, তাদের কাছ থেকে মিলেছে ওই ব্যক্তিরই আধার কার্ড। সেটি দিয়েই নাকি সিম কার্ডটি নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই ব্যক্তির তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা! শেষে জানা যায়, যদুবাবুর বাজার সংলগ্ন এলাকার ওই বাসিন্দা নির্দোষ। দিন কয়েক আগে ওই ব্যক্তির ফোনেও এসেছিল নম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত একটি মেসেজ। নম্বর চালু রাখতে সেই মেসেজে দেওয়া ফোন নম্বরেই তিনি নিজের আধার কার্ডের তথ্য জানিয়েছিলেন। এর পরে সেই তথ্য দিয়েই ভুয়ো সিম তুলে করা হয় ব্যাঙ্ক প্রতারণা!

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গত কয়েক মাসে ফোন নম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ার নামে অনেকেই এমন মেসেজ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কোনও ঘটনায় সরাসরি টেলি অপারেটিং সংস্থার নাম করে মেসেজ পাঠিয়ে ব্যাঙ্কে থাকা টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কোনও ঘটনায় আবার ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোনটিকে ‘ক্লোন’ করে নিয়ে হাতানো হয়েছে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি। এর পরে সেই তথ্য ও ছবি হাতিয়ার করেই শুরু হয় ‘ব্ল্যাকমেল’! একাধিক ক্ষেত্রে আবার ফোন নম্বরের ‘কেওয়াইসি আপডেট’ করার নাম করে ভোটার বা আধার কার্ড হাতিয়ে বাজার থেকে তোলা হচ্ছে ভুয়ো সিম কার্ড। অপরাধের শরিক না হয়েও অনেকেই পরে পুলিশ মারফত জানতে পারছেন, তাঁর নামের সিম কার্ডের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে! এমনই এক ভুক্তভোগীর দাবি, ‘‘আমার সিম কার্ড দিয়ে নাকি একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছড়ানো হচ্ছে। পুলিশ লালবাজারে ডেকে জানাল এক দিন। সেখানেই এর পরে হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছি।’’

Advertisement

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, আনলক-পর্বে আগের চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেড়েছে সাইবার প্রতারণার ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই প্রতারণার নতুন নতুন কৌশলের কথা জানা যাচ্ছে। তার মধ্যেই অন্যতম ফোন নম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ার ‘গল্প’। চলতি বছরে এমন মেসেজের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার ৬৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে লালবাজারে। ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এসেছে মোট ৩৮টি। যদিও এর পরেও এই চক্রের কাউকেই এখনও পর্যন্ত পুলিশ ধরতে পারেনি বলে খবর।

লালবাজারের সাইবার থানার এক আধিকারিকের দাবি, এই চক্র একসঙ্গে একাধিক সিম কার্ড ব্যবহার করে। সাধারণ মানুষের থেকেই তাঁদের পরিচয়পত্র নিয়ে ভুয়ো সিম তোলে এরা। টাকা হাতানো হয়ে গেলেই ফেলে দেয়। ফলে এই চক্রকে সিম কার্ড ধরে ‘ট্র্যাক’ করা মুশকিল।
লালবাজারের সাইবার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের দাবি, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই এরা ইন্টারনেটের প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে যান্ত্রিক মোবাইল মেসেজ পাঠায়। ফলে দেহরাদূনে না দত্তপুকুরে বসে চক্র কাজ করছে, ধরাও যায় না।’’

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘এই প্রতারণা-চক্রের সঙ্গে রাস্তার ধারের সিম কার্ড বিক্রির দোকানগুলির একটা সমঝোতা তৈরি হয়েছে। এই জায়গাটায় পুলিশের বাড়তি নজর দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে গ্রাহককে মনে রাখতে হবে, নম্বর বন্ধ হওয়ার ভয়েই হোক, আর যে কারণেই হোক, ফোনে কোনও ব্যক্তিগত তথ্যই কাউকে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement