— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কলকাতা পুরসভা বলছে, কলকাতা পুলিশের দেখার কথা। পুলিশ বলছে, পুরসভা তো বেআইনি পার্কিং ধরে জরিমানা করার অ্যাপ বানাচ্ছে! ফলে দেখবে তারাই। এই দায় ঠেলাঠেলির কারণেই কি আরও জটিল আকার নিচ্ছে কলকাতার বেআইনি পার্কিং সমস্যা? আগামী অর্থবর্ষের পুর বাজেট পেশের পরে এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবর্ষে পার্কিং ফি বাবদ রাজস্ব আদায় বিপুল ভাবে ধাক্কা খেয়েছে জানার পরে পুরপ্রতিনিধিদের একাংশও এখন এ নিয়ে নতুন করে সরব হয়েছেন।
গত সোমবার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বিজয় ওঝা বেআইনি পার্কিং নিয়ে অভিযোগ
করেছেন পুরসভায়। তাঁর দাবি, শহরের অন্যতম প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্র বড়বাজারের রাস্তা ‘পার্কিং মাফিয়াদের’ দখলে চলে গিয়েছে। পুলিশ কিছুই করে না। পুরসভাতেও বলে লাভ হয় না। ফুটপাতের উপরেও নির্দ্বিধায় গাড়ি রাখা হয় বলে অভিযোগ এই বিজেপি পুরপ্রতিনিধির। আগামী অর্থবর্ষের বাজেটে পার্কিং ফি বাবদ ৩০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও বেআইনি পার্কিং বন্ধ করা না-গেলে আদৌ সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
যদিও এমন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই গত বছর পুজোর আগে বেআইনি পার্কিং বন্ধে অ্যাপ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল পুরসভা। বলা হয়েছিল, ‘কেএমসি এমপ্লয়ি মোবাইল অ্যাপ’ নামে এই অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই পার্ক করা কোনও গাড়ি বা যানবাহনের ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করতে পারবেন পুরসভার কর্মীরা। জিপিএস লোকেশন-সহ গাড়ির ছবি পুরসভার কাছে নথিবদ্ধ হবে এবং মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে গাড়ির মালিককে জরিমানার কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যুক্ত থাকবে পরিবহণ দফতর ও কলকাতা পুলিশও। সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্ত গাড়ির
চালককে অনলাইনে বা পুরসভায় গিয়ে জরিমানা মিটিয়ে আসতে হবে। টাকা না মেটালে জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এক বছরের মধ্যে জরিমানার অর্থ জমা না পড়লে বছরের শেষে গাড়ির ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। পুরসভার তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের তরফে পার্কিং দফতরের ন’জনকে এর জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় সেই সময়ে। সেই কর্মীরা শহরের রাস্তায় ঘুরে বেআইনি পার্কিং দেখলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, এত কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে কী করে সারা শহরের বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুরসভা?
অভিযোগ, ওই অ্যাপ তৈরির ঘোষণার পর থেকেই বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কারা ব্যবস্থা নেবে, তা নিয়ে পুলিশ ও পুরসভার মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি আরও চরমে ওঠে। এত দিন টেন্ডার পাওয়া সংস্থা পুরসভার পার্কিং লটের দায়িত্ব সামলাত। রাতের শহরে রাস্তায় গাড়ি রাখলে পুরসভাকে মাসে ৫০০ টাকা করে দিতে হত। পরিবর্তে গাড়ির মালিককে দেওয়া হত পার্কিংয়ের স্টিকার। আবার রাতে বেআইনি পার্কিং করলে গাড়ি-পিছু এক হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করত পুরসভা। দিনের অন্যান্য সময়ে পুলিশ বেআইনি পার্কিংয়ের বিষয়টি দেখত। এমনকি, রাতেও পুরসভার কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বেআইনি ভাবে রাখা গাড়ির চাকায় কাঁটা লাগিয়ে দিতেন।
এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘অ্যাপ বানিয়ে পুরসভা নিজেই যে হেতু জরিমানার নোটিস পাঠাবে বলে জানিয়েছে, তাই পুলিশের তরফে আলাদা করে এখন সে ভাবে কিছু করা হচ্ছে না। শুধু যানবাহনের পথ আটকালেই পুলিশ গিয়ে সেই বেআইনি পার্কিং সরিয়ে দিচ্ছে।’’ লালবাজারের ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগের এক কর্তারও মন্তব্য, ‘‘জরিমানা আদায় বা অন্য আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের সাহায্য নেন পুরকর্মীরা। কিন্তু অ্যাপ তৈরির
ঘোষণার পরে রাতের বেআইনি পার্কিং পুরসভাই দেখবে বলে জানানো হয়েছে। দিনের
বেলাতেও পুরসভার পার্কিং লটের বিষয়ে কোনও অভিযোগ পেলে তবেই পুলিশ তাতে ঢোকে।’’
এই দায় ঠেলাঠেলিতেই কি তবে জটিল চেহারা নিচ্ছে বেআইনি পার্কিংয়ের রোগ? কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কড়া হাতে পার্কিং সমস্যা মেটাতে চেয়েছিলাম আমরা। আপাতত নতুন কী পদক্ষেপ করা যায়, ভাবা হচ্ছে। কিন্তু তত দিন পুলিশকেও আগের মতোই কড়া হয়ে কাজ করতে হবে।’’