KMC Election 2021

KMC election 2021: ‘পার্কিংয়ের লাভের গুড় যায় কত দূর?’

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে ১৫৬টি বৈধ পার্কিংয়ের জায়গায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার গাড়ি রাখা হয়।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০১
Share:

নিয়ম-ভঙ্গ: ক্যামাক স্ট্রিটের ‘নো পার্কিং’ এলাকায় রাস্তার পাশে পরপর দাঁড়িয়ে গাড়ি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

ঘটনা ১: পার্ক স্ট্রিটে গাড়ির গতি কিছুটা কমতেই এক যুবক ছুটে এসে বললেন, ‘‘অফিস টাইমে আর জায়গা পাবেন না। এখন রাখলে ঘণ্টায় ৮০ টাকা! পরে কত হবে জানি না।’’

Advertisement

এত টাকা? পুরসভার চার্ট আছে? যুবক বললেন, ‘‘আমরা যা বলছি, সেটাই দিতে হবে।’’

ঘটনা ২: ক্যামাক স্ট্রিট জুড়ে এলাকা ভাগ করে পার্কিং করাচ্ছে পাঁচ-ছ’জনের দল। এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাতেই চক দিয়ে এক জন সময় লিখে দিলেন গাড়ির কাচে।মিনিট তিরিশ পরেই গাড়ি নিয়ে বেরোনোর সময়ে ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘আশি টাকা হয়েছে।’’ তিরিশ মিনিটে আশি টাকা? পুরসভার চার্ট কোথায়? নেতা গোছের এক জনকে ডেকে আনলেন ওই ব্যক্তি। তিনি এসে গলায় ঝোলানো যন্ত্র দেখিয়ে বলেন, ‘‘যাঁরা চার্ট চেয়ে ঝামেলা করেন, তাঁদেরই এটা থেকে টোকেন দিই। আপনি ১০ টাকা দিন!’’

Advertisement

ঘটনা ৩: দিনের ব্যস্ত সময়ে গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে পার্কিংয়ে রাখা ছিল গাড়ি। দু’ঘণ্টার জন্য চাওয়া হল ১৬০ টাকা! বিল কোথায়? পার্কিং সামলানোর দায়িত্বে থাকা যুবকের মন্তব্য, ‘‘বিল দিতে হলে খাব কী? মালিক আমাদের বেতন দেন না। তাঁর ভাগের মাসিক টাকা মিটিয়ে উপরি যা থাকে, সেটাই আমাদের আয়।’’

পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, গড়িয়াহাট— শহরের পার্কিং মানচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। পুরসভার হিসাব, প্রতি দিন এই রাস্তাতেই সব চেয়ে বেশি গাড়ি রাখা হয়। পুর নির্বাচনের আগে শহর ঘুরতে বেরিয়ে সেই সব রাস্তাতেই দেখা গেল, পার্কিংয়ের রমরমা কারবার। পুর নির্দেশিকা মেনে টোকেনের যন্ত্র বা চার্ট ব্যবহারের বালাই নেই, নেই ট্র্যাফিক বিধি মানার চেষ্টাও। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শহর জুড়ে প্রায় একই অবস্থা। কোথাও গাড়ি তুলে দেওয়া হয় ফুটপাতে। কোথাও আবার স্কুল-কলেজ, বাড়ির গেট আটকে চলে যেমন খুশি টাকা হেঁকে ব্যবসা।

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে ১৫৬টি বৈধ পার্কিংয়ের জায়গায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার গাড়ি রাখা হয়। এর বাইরে সবই চলে স্থানীয় নেতার মর্জিতে। যেমন, ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে বেআইনি পার্কিংয়ের দাপটে দমকলের গাড়িই বার করা যায় না বলে অভিযোগ। সেখানে খালের ধারটাই দখল হয়ে আছে দাঁড়িয়ে থাকা লরির জটে। রাত বাড়লে তা আরও বাড়ে। ক্যানাল ওয়েস্ট রোড দমকল কেন্দ্রের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘বহু বার এমন হয়েছে যে, আগুনে বস্তি পুড়ে যাচ্ছে জেনেও গাড়ি বার করে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারিনি।’’ বালিগঞ্জের ফার্ন রোডের বাসিন্দাদের আবার অভিযোগ, বাড়ির প্রবেশপথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি। তাই নিজের বাড়িতেই ঢোকা যায় না। পুলিশে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।

আর এন মুখার্জি রোড, ব্রেবোর্ন রোড, হগ স্ট্রিট, মার্কেট স্ট্রিট, রাসেল স্ট্রিট ঘিরে গাড়ি পার্কিংয়ের অভিযোগ নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। পুলিশের এক কর্তার দাবি, প্রতিদিন সব চেয়ে বেশি বেআইনি পার্কিংয়ের অভিযোগ আসে কলকাতা পুলিশের সেন্ট্রাল ডিভিশন থেকে। বাদ যায় না নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোড, হরিশ মুখার্জি রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ বা বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাও। স্থানীয়দের দাবি, টালা সেতু ভাঙার পরেও প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোডের মতো সেতু সংলগ্ন রাস্তা থেকে বেআইনি পার্কিংয়ের জট সরেনি। বৌবাজারের একাধিক জায়গায় অর্ধেক ফুটপাত এবং অর্ধেক রাস্তা নিয়ে ফেঁদে বসা হয়েছে পার্কিং ব্যবসা।

পুরকর্তাদের যদিও দাবি, এই ব্যবসা রুখতেই পার্কিং জ়োনে প্রকাশ্যে রেট চার্ট লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু জায়গায় ডিজিটাল বোর্ডে ক’টি গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে, কতটা জায়গা ফাঁকা রয়েছে, সে তথ্যও দেখানোর কথা। রাখতে বলা হয়েছে টোকেনের যন্ত্র। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এর কোনওটিই হয় না। বরং টোকেনের যন্ত্র থাকলেও কারসাজি করে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

বিদায়ী পুর প্রশাসকমণ্ডলীর এক কর্তা বলছেন, ‘‘হয়তো পুরসভা দরপত্র ডেকে কোনও সংস্থাকে ১০টি গাড়ি রেখে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। সেখানে ওই সংস্থা ১৫টি বা তারও বেশি গাড়ি রাখছে। এতে বাড়তি আয় যাচ্ছে সংস্থায়। পুরসভা তো বাড়তি টাকা পাচ্ছেই না, বরং দুর্ঘটনা বাড়ছে।’’

কঠোর পদক্ষেপ করা হয় না কেন? আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এক নেতা বললেন, ‘‘এই কথা বলতে গিয়েই পার্কিংয়ে থাকা ছেলেদের হাতে মার খেয়েছি। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ক্ষমা চেয়ে নিতেই নতুন দরপত্রে সেই সংস্থাই সুযোগ পেয়েছে। অনেকেরই জানা আছে, পার্কিংয়ের লাভের গুড় যায় কত দূর!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement